দিনে ইটভাটার শান্ত-ভদ্র শ্রমিক। সন্ধ্যা নামতেই ওত পেতে থাকে শিকারের অপেক্ষায়। শিকার উঠতি বয়সী মেয়েরা। সুযোগ পেলেই চালায় নির্যাতন। ফুলবাড়িয়ায় অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার পাঁচ যুবকের থেকে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, এই চক্রটি ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’। স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের টার্গেট করে একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় চক্রের সদস্যরা। গতকাল শনিবার সকালে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা সংবাদ সম্মেলন করে স্কুলছাত্রী হত্যার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ফুলবাড়িয়া উপজেলার একটি গ্রামে বাড়ির পাশের একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর (১৪) মরদেহ। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ওই ছাত্রী। প্রথমে বিষয়টি স্থানীয়রা আত্মহত্যা মনে করলেও পুলিশ সুরতহাল করতে গিয়ে ধর্ষণের আলামত পায়। এ ঘটনায় ২৬ ফেব্রুয়ারি থানায় মামলা করেন নিহতের মা।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, সিফাত নামের এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ছাত্রীর।  নিয়মিত মোবাইল ফোনে কথা বলত তারা। কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ শেষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। গত শুক্রবার অভিযান চালিয়ে আটক করে ধর্ষণ ও হত্যায় অংশ নেওয়া ৫ জনকে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো– ফুলবাড়িয়া উপজেলাটির রাধাকানাই ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের মো. শাহজাহান (২৬), শহীদ মিয়া (৩৮), আলমগীর হোসেন (২৪), রাসেল মিয়া (১৯) ও পলাশতলী গ্রামের মাসুম বিল্লাহ ওরফে ফজর আলী (২২)। তাদের মধ্যে রাসেল মিয়া ও আলমগীর হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত জাহানের আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়। বাকি তিন আসামিকে দু’দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাদের আগামী সোমবার আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ জানায়, চক্রটির হোতা শাহজাহান ও মো. শহীদের নেতৃত্বে এলাকার স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রীদের অনুসরণ করে অপহরণ, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। শাহজাহান ও শহীদ অপহরণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের একাধিক ঘটনায় জেল খেটেছে। তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলা বিচারাধীন। চক্রের সদস্যরা দিনের বেলায় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করলেও রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটায়।
ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার শাহজাহানের কাছ থেকে ছাত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ছাত্রীটির বাড়ির পাশে আগের থেকেই অপেক্ষা করছিল চক্রের সদস্যরা। এর মধ্যে প্রকৃতির ডাকে বাইরে বের হলে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তার পর চলে দলবদ্ধ নির্যাতন। শাহজাহানের নেতৃত্বে চক্রটি গত চার বছরে স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ও প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে।
স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে যে নৃশংস অত্যাচার হয়েছে, তা আর কারও সঙ্গে যেন না হয়। সব অপরাধীর ফাঁসির দাবি করছি।’
পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা জানান, ওই স্কুলছাত্রী বিকৃত যৌনাচারের শিকার। দলবদ্ধ ধর্ষণ শেষে যেন পরিচয় প্রকাশ না হয়, সে জন্য আটজন মিলে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায়। আটজনই সিরিয়াল রেপিস্ট। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।