'ইউনাইটেড স্টেট অব কৈলাসা'- এই নামে পৃথিবীতে কোনো দেশ আছে কীনা জানতে চাইলে অনেকে আকাশ থেকে পড়তে পারেন! কেউ বলতে পারেন না দেশটির অবস্থান কোথায়! অথচ সেই 'কৈলাসা'ই এখন খবরের শিরোনাম। যে দেশের ভৌগোলিক অস্তিত্ব নেই, সেই দেশের প্রতিনিধি যখন জাতিসংঘের সভায় হাজির হন তখন তা খবর না হয়ে উপায় আছে!

'কৈলাসা'র প্রতিষ্ঠাতা ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়া ধর্মগুরু নিত্যানন্দ। তারই প্রতিনিধিরা সম্প্রতি জাতিসংঘের দুটি অফিসিয়াল অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে 'কৈলাসা'র স্বীকৃতি দাবি করেন। কিন্তু জাতিসংঘ সেই দাবি আমলে নেয়নি। 

গেল ফেব্রুয়ারিতে জেনেভায় জাতিসংঘের দুটি কমিটির বৈঠকে যোগ দেন 'কৈলাসা'র দুই প্রতিনিধি। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলছেন, তাদের বিবৃতি ও দাখিল করা বক্তব্য 'অপ্রাসঙ্গিক'।  

নিত্যানন্দ ভারত থেকে পালিয়ে গেছেন এবং দেশটিতে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। সেই নিত্যানন্দের দাবি, তিনি ২০১৯ সালে 'ইউনাইটেড স্টেটস অব কৈলাসা' নামে একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং এটিই এখন সবচেয়ে বড় স্বাধীন সার্বভৌম হিন্দু রাষ্ট্র।

সম্প্রতি জাতিসংঘের এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন 'ইউনাইটেড স্টেটস অব কৈলাসা'র এক প্রতিনিধি। মূলত সে কারণেই বিষয়টি এখন সংবাদমাধ্যমের নজরে। এ বিষয়ে, জাতিসংঘের প্রতিনিধি মি. কক বলেছেন, জেনেভায় জাতিসংঘের দুটি কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন কৈলাসার প্রতিনিধিরা। ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিল- সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর ভূমিকা এবং ২৪ ফেব্রুয়ারির বৈঠকের বিষয় ছিল- টেকসই উন্নয়ন। দুটি বৈঠক সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। এই দুটি বৈঠকেই উপস্থিত ছিলেন 'কৈলাসা'র দুই প্রতিনিধি।  

জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'বৈঠকে কৈলাসার প্রতিনিধিরা লিখিত যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আমাদের প্রতিবেদনে অর্ন্তভুক্ত হবে না; কারণ সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক ও স্পর্শকাতর।'

এক ভিডিওতে দেখা যায়, জাতিসংঘের সভায় কৈলাসার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়ে এক নারী নিজেকে বিজয়প্রিয়া নিত্যানন্দ বলে পরিচয় দেন। দেশটির স্থায়ী রাষ্ট্রদূত হিসেবেও নিজেকে দাবি করেন তিনি। বৈঠকে বিজয়প্রিয়া বলেন, 'কৈলাসা হিন্দুদের জন্য প্রথম সার্বভৌম দেশ। হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ পুরোহিত নিত্যানন্দ পরমাশিবম এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।' তিনি আরও দাবি করেন, 'ভারতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নিত্যানন্দ।' 

'কৈলাসা'র প্রতিষ্ঠাতা নিত্যানন্দ 

বিজয়প্রিয়ার দাবি, 'নিত্যানন্দ প্রাচীন হিন্দু সভ্যতা ও হিন্দুদের ১০ হাজার ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এই কাজ করতে গিয়ে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন তিনি। হিন্দু ধর্মের প্রাচীন রীতিনীতি পালন করায় নির্যাতিত হতে হয়েছে তাকে। মাতৃভূমিতে ধর্মপ্রচারে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।'

বিজয়প্রিয়ার পর কৈলাসার আরেক প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন। তিনি নিজেকে ইএন কুমার নামে পরিচয় দেন। নিজেকে ক্ষুদ্র কৃষক উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, 'কৈলাসা ইকুয়েডরের উপকূলে অবস্থিত একটি দেশ, যার নিজস্ব পতাকা, পাসপোর্ট ও রিজার্ভ ব্যাংক রয়েছে।' বৈঠকে তিনি জানান, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নিত্যানন্দ কৈলাসায় ফ্লাইট চলাচলের ঘোষণা দিয়েছেন। এটি সীমানা ছাড়া এক দেশ। মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হিন্দুরা এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।' 

কিন্তু জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, সত্যিকার অর্থে 'কৈলাস' নামে কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কোথাও নেই। 

সংবাদমাধ্যমের খবর, নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে ভারতে শিশু ধর্ষণ, শোষণ ও অপহরণের অভিযোগে মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালে তিনি ভারত থেকে পালিয়ে যান। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে ব্লু কর্নার নোটিশ জারি করে। গত বছরের আগস্টে বেঙ্গালুরুর রামনগরের একটি আদালত ২০১০ সালের এক ধর্ষণ মামলায় নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এমন এক ব্যক্তির প্রতিনিধি কীভাবে জাতিসংঘের বৈঠকে যোগ দিলেন- তা নিয়ে এখন হাজার প্রশ্ন ও বিস্ময়! প্রশ্ন উঠেছে, যে দেশের অস্তিত্বই নেই সেই দেশের প্রতিনিধি কীভাবে জাতিসংঘের অনুষ্ঠানে অংশ নেন? সূত্র: বিবিসি ও এনডিটিভি

বিষয় : নিত্যানন্দের কৈলাসা কাল্পনিক দেশ ইউনাইটেড স্টেটস অব কৈলাসা

মন্তব্য করুন