- আন্তর্জাতিক
- ঋণ পরিশোধ ভয়াবহ হয়ে আসছে: আনু মুহাম্মদ
ঋণ পরিশোধ ভয়াবহ হয়ে আসছে: আনু মুহাম্মদ

সরকার আইএমএফের ঋণ নেওয়ার কারণ দেখালো, বৈদেশিক ঋণের সঙ্কটের কারণে আমদানি ব্যয় মেটানো যাচ্ছে না, এলসি খোলা যাচ্ছে না, প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জাম আনা যাচ্ছে না, উৎপাদনের কাঁচামাল জাহাজ থেকে খালাস করা যাচ্ছে না। কিন্তু যে পরিমাণ রিজার্ভ দেখানো হচ্ছে তাতে এরকম সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। আসলে ঋণ পরিশোধের চাপ আসছে সেটা ভয়াবহ হয়ে আসছে।
‘বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিশ্ব পরিস্থিতি’ শীর্ষক সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার অডিটোরিয়ামে মওলানা আবদুল হামিদ ভাষানী পরিষদ এ সভার আয়োজন করে। সভায় সভাপ্রধান ছিলেন সংগঠনের সভাপতি এস এম কামাল ও আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা।
আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার উদার হস্তে ঋণ করেছে মেগাপ্রকল্পে। এমনকি বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টর যে ঋণ করেছে সেগুলোরও জিম্মাদার হয়েছে সরকার। কেননা এই সেক্টরের বেশিরভাগ হচ্ছে সরকারের লোক। এইগুলো দ্রুতই পরিশোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রবাসীরা দেড় মাসে যে রেমিটেন্স পাঠায় আইএমএফ তিনবছর ধরে সেই পরিমাণ ঋণ দেবে। তাও সেটি পুরো পাবে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। পরিমাণগত দিক থেকে এই ঋণ সঙ্কট কমাবে না। তবুও এত শর্ত মেনে ঋণ নিয়েও সরকার খুশি হওয়ার কারণ, এই নেওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে আরও ঋণ নেওয়ার স্বীকৃতি পেল। তারা আরও ঋণ নিতে পারবে। এই কারণে তারা খুশি। তবে আমাদের জনগণের খুশি হওয়ার কারণ নেই, এই ঋণ আমাদের ঘাড়েই চাপবে।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, সরকার খুশি হয়েই তেল বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। কারণ এর থেকে একটি অংশ সুবিধাভোগী হয়। বিশেষত গত বিশ বছরে যাদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পুঞ্জিভূত হয়েছে। সরকারের যে সমস্ত প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, এর বিপরীতে যারা সুবিধাভোগী হয়েছে যেমন বেক্সিমকো, সামিট গ্রুপ, বসুন্ধরা, ইউনাইটেড। এই মেগা প্রকল্পে তারাই সিমেন্ট দিচ্ছে, রড দিচ্ছে। তারাই উপকৃত হচ্ছে। এই মেগাপ্রকল্পের তিনটি পরিণতি হচ্ছে, কর্পোরেট হাউজগুলোর সম্পদের কেন্দ্রীভূত হয়েছে, বৈষম্য বাড়ছে, নদীনালা খালবিলে ভয়াবহ বিপর্যয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়েছে। সরকারের কিছু করার নাই এমনটি মনে হবে। এটি কিন্তু অনিবার্য ছিল না। ইউক্রেন সঙ্কট বাংলাদেশের জন্য অনিবার্য ছিল না। বাংলাদেশ যদি নিজস্ব গ্যাস সম্পদ, নবায়নযোগ্য এনার্জি, জাতীয় সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে জ্বালানি বিদ্যুত মহাপরিকল্পনা এবং অবকাঠামোগত পরিকল্পনা করত তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে যতই বাড়ুক আমাদের তেমন প্রভাব পড়ত না।
মোশাহিদা সুলতানা বলেন, সবকিছুতে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সঙ্কট দেখিয়ে সরকার দেখাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ তার হাতে নেই। রমজান কেন্দ্র করে চিনিতে সুবিধা দেওয়া হলেও চিনির দাম কমছে না। খাদ্যপণ্য যে কৌশলগত খাত, সেটি পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে হবে না, এটা জেনেও আমাদের পরিবর্তন হচ্ছে না। সঞ্চয় কমছে, জিনিসপত্রের দাম হুহু করে বাড়ছে। শিল্প বিকাশের নামে কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হচ্ছে। তবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
কামাল উদ্দিন বলেন, দেশ উন্নত হচ্ছে বলা হচ্ছে, কিন্তু গরীবের আয় বাড়েনি। সঙ্কট আরও আসছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করতে পারছি না। সুশাসনে বিশাল ঘাটতি আছে। আমাদের এখানে দুর্নীতি বেড়েছে। অথনীতি ভালোভাবে পরিচালিত না হলে সংকট আরও বাড়বে।
মন্তব্য করুন