- আন্তর্জাতিক
- চীনকে থামানোর প্রত্যাশা পূরণ হবে কি
চীনকে থামানোর প্রত্যাশা পূরণ হবে কি

নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত পরবর্তী প্রজন্মের সাবমেরিন বহর তৈরির বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া। এ বিষয়ে তিন দেশের মধ্যকার চুক্তিকে বলা হচ্ছে ‘অকাস চুক্তি’। গত সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোতে ওই চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নেতারা। এদিন প্রকাশ করা নতুন পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য– ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলা। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ঘাঁটিতে রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ বছর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম পারমাণবিক শক্তিচালিত নৌবহরের নেতৃত্ব দেবে বলে দেশ দুটির আশা।
চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে পাঁচটি পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন কিনবে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া তিনটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। সাবমেরিন বহরে থাকবে যুক্তরাজ্য নির্মিত রোলস-রয়েস রিঅ্যাক্টরসহ অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ২০২৭ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ছোট একটি সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি করবে। ২০৩০ সাল নাগাদ ভার্জিনিয়া ক্লাস তিনটি আমেরিকান সাবমেরিন কিনবে অস্ট্রেলিয়া। তাদের জন্য আরও দুটি সাবমেরিন কেনার সুযোগ থাকবে। এরপর যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর জন্য নতুন ধরনের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরি করা হবে, যার নাম এসএসএন-অকাস। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় এই সাবমেরিনগুলো তৈরি হবে ব্রিটিশ নকশায়। তবে এগুলো তৈরিতে তিন দেশ থেকেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ২০৪০ সালের শুরুর দিকে রয়্যাল নেভিতে নিজেদের তৈরি অকাস সাবমেরিনের প্রথম সরবরাহ করবে অস্ট্রেলিয়া।
এদিকে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন চীনের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শি জিনপিং। অস্ট্রেলিয়া নিজেদের নৌবহরে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন চালুর সময় শি’র বয়স হবে ৯০ বছর। ততদিনে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দৃশ্য বদলে যাবে। ৬৯ বছর বয়সী শি এটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাইওয়ান দ্বীপ নিজেদের দাবি করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, কিন্তু কখনও শাসন করেনি। এটি কখনোই অনিশ্চিতভাবে অন্যদের হাতে তুলে দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন শি।
পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন যদি তাইওয়ানের দখল নিতে পারে তাহলে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে অবাধে ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে। এ কারণে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ২০২১ সালে অকাস চুক্তির ঘোষণা দেয় তিন দেশ।
বরাবরই চুক্তিটির বিরোধিতা করে আসছে চীন। কারণ, এই চুক্তিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতির প্রতিকূল হিসেবে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা মিশন বলে, অকাস চুক্তির মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) উদ্দেশ্য লঙ্ঘন করছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এছাড়া চুক্তির বিষয়ে তিন দেশকে সতর্ক করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গতকাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগকে উপেক্ষা করছে। তারা ভুল ও বিপদের পথে এগোচ্ছে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতায় উস্কানি দিচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া বলছে, তারা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানেই পারমাণবিক উপাদান ও প্রযুক্তিগুলো হস্তান্তর করবে। খবর: বিবিসি, সিএনএন ও এএফপির।
মন্তব্য করুন