খালিস্তানিদের সর্বশেষ ‘পোস্টার বয়’ অমৃতপাল সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়েছেএমন খবরে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা পাঞ্জাব। এ অবস্থায় সংবাদ সম্মেলন করে পাঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হননি অমৃতপাল!

রুদ্ধশ্বাস পুলিশি অভিযানে জলন্ধরের কাছে শাহহোট থেকে অমৃতপাল সিংকে গ্রেপ্তার করেছে পাঞ্জাব পুলিশ এমনটাই শোনা গিয়েছিল শনিবার বিকেলে। যদিও সেসময় অমৃতপালকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার বা অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি পুলিশ। তবে আজ রোববার সকালে পাঞ্জাব পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, জলন্ধরের শাহকোট তহশিলে যাওয়ার পথে খালিস্তানি নেতার বহরকে ধাওয়া করেছিল পুলিশ। তবে অমৃতপাল সিংকে গ্রেপ্তার করা যায়নি, মোটরসাইকেলে চেপে পালিয়ে যান তিনি। তাঁকে ধরতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যদিও অমৃতপালের অনুসারীদের দাবি- অমৃতপালকে কৌশলে 'এনকাউন্টারের' চেষ্টা করছে পাঞ্জাব পুলিশ।

এদিকে, রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোটা রাজ্যেই শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ।

গতকাল শনিবার সকাল থেকে খালিস্তানি নেতা ও স্বঘোষিত শিখ ধর্মগুরু অমৃতপাল সিং ও তার অনুসারীদের ধরতে পাঞ্জাবজুড়ে শুরু হয় বড় ধরনের পুলিশি অভিযান। রাজ্যজুড়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। দিনভর চলে টানটান উত্তেজনা। এক পর্যায়ে  অমৃতপালের স্ত্রীসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলের দিকে চাউর হয়- জলন্ধরের নাকোদর থেকে গ্রেপ্তার হয়ছে আমৃতপালকে। তবে রোববার সকালে পুলিশ নিশ্চিত করেছে গ্রেপ্তার হননি আমৃতপাল।

জনপ্রিয় পাঞ্জাবি অভিনেতা তথা খালিস্তানি নেতা দীপ সিধু 'ওয়ারিস পাঞ্জাব দে' নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন। দীপ সিধু গতবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তারপর থেকে এই সংগঠনটি চালাচ্ছেন অমৃতপাল। প্রথম দিকে সংগঠনটি বঞ্চনার বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের জনগণের দাবি-দাওয়া নিয়ে লড়ার কথা বলত। কিন্তু অমৃতপাল দায়িত্ব নেওয়ার পর সংগঠনের কার্যকলাপ চরমপন্থী এবং হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। মাত্র ৩০ বয়সেই পাঞ্জাব সরকারের ত্রাস হয়ে ওঠেন স্বঘোষিত এই খালিস্তানি নেতা। দুবাই ফেরত অমৃতপাল প্রকাশ্যেই নিজেকে খালিস্তানি নেতা ভিন্দ্রেনওয়ালের অনুসারী বলে দাবি করেন। সামরিক পোশাক পরে ঘুরে বেড়ান শত শত অনুসারী নিয়ে, যাদের অনেকেই আবার আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত।

পাঞ্জাবের যুবসমাজে এতটাই তাঁর প্রভাব যে, তার এক ডাকে পাঞ্জাবের বিস্তীর্ণ এলাকায় দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। অশান্তির আশঙ্কায় অমৃতপালের বিরুদ্ধে এতদিন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি সরকার। এর আগে অপহরণ, ড্রাগ পাচারের অভিযোগে অমৃতপালের এক শিষ্য লভপ্রীত সিং গ্রেপ্তার হলে অমৃতপালের বাহিনী জলন্ধর জুড়ে তাণ্ডব চালায়। এতে অন্তত সাতজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তা আহত হন। তবে বিরোধীদের চাপের মুখে অবশেষে অমৃতপালকে ধরতে পুলিশি অভিযান চালানো হয়।

রাজ্যজুড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শনিবার দুপুর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ভুয়া খবর ছড়ানো বন্ধ রাখতে এ পরিষেবা বন্ধ রাখা হয় বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ভারতের পাঞ্জাবে প্রায় তিন বছর ধরে খালিস্তানপন্থীরা নতুন করে মাথাচাড়া দেয়। ভারতের বাইরে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতেও চলছে তাদের কার্যক্রম।