‘শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও জীবনমান উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে’– বলে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার গভর্নিং বডির অধিবেশনে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির ৩৪৭তম অধিবেশনে মঙ্গলবার মন্ত্রী এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। 

আনিসুল হক বলেন, ‘গত ২০২২ সালে কারখানাগুলোতে ৩৯ হাজার পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২৬ শতাংশ বেশি।’ রোডম্যাপ প্রণয়নের মাত্র দেড় বছরে ৮১ জন নতুন কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ করা হয়েছে যা চলতি বছরে আরও বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান। শ্রমিকদের অভিযোগের ন্যায়-বিচার নিশ্চিত করতে তিনটি নতুন শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 

ফলশ্রুতিস্বরূপ, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারসহ অন্যান্য শ্রম অধিকার লংঘনের ৫০টি অভিযোগের মধ্যে ৪১টি অভিযোগের বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৯টি অভিযোগ বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও, সালিশীর জন্য প্রাপ্ত অভিযোগের ৯৭ শতাংশ এরই মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলেও মন্ত্রী তথ্য প্রদান করেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য শ্রম মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (ইপিজেড) হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরও বলেন, ‘শ্রম মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন ২০২২ সালের শেষ ছয় মাসে প্রাপ্ত অভিযোগসমূহের ৯৫ শতাংশ এবং ইপিজেড কর্তৃপক্ষের হেল্পলাইনে পাওয়া অভিযোগের ৯৯.৫ শতাংশ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। মন্ত্রী এ সময় অনলাইন কারখানা পরিদর্শন সিস্টেম লিমা প্রতিষ্ঠা এবং মাইগভ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন চালু, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়ন, এক লাখেরও বেশি শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ থেকে তুলে এনে উপযুক্ত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে কর্মক্ষেত্রে নারীদের হয়রানি রোধে কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

মন্ত্রী বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাসহ দেশের শ্রমঘন সকল খাতে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। একারণেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লিডস এর র‌্যাংকিং এ সেরা দশটি কারখানার মধ্যে নয়টি এবং সেরা একশ কারখানার মধ্যে বায়ান্নটি বাংলাদেশে অবস্থিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। একটি জনবহুল দেশে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহের পাশাপাশি কোভিড মহামারি ও যুদ্ধের ফলে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আইনমন্ত্রী বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে গভর্নিং বডির সদস্যরা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং উন্নতর কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রসংশা করেন।