- আন্তর্জাতিক
- নির্বাচনেও অযোগ্য রাহুল
নির্বাচনেও অযোগ্য রাহুল

মানহানির মামলায় দণ্ডিত কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীকে ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার লোকসভা সচিবালয় তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। রাহুল কেরালার ওয়েনাড আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় তাঁর সংসদ সদস্যপদ খারিজ হয়ে গেল। অর্থাৎ তিনি আর লোকসভার সদস্য থাকছেন না।
রাহুলের লোকসভার সদস্যপদ বাতিল চেয়ে সম্প্রতি আবেদন করেন ঝাড়খণ্ডের এক বিজেপি এমপি। উচ্চ আদালত সংসদের সিদ্ধান্ত রহিত না করলে রাহুল আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যপদ হারানোর পাশাপাশি আগামী ৬ বছর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। বৃহস্পতিবার ‘মোদি’ পদবি নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে মানহানি মামলায় কংগ্রেস নেতা রাহুলকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেন গুজরাটের সুরাটের আদালত। চার বছর আগে মামলাটি করেন বিজেপি বিধায়ক ও গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুর্নেশ মোদি। ‘সব চোরের নামের পদবি মোদি হয় কী করে?’– মন্তব্যের জেরে রাহুলের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। সাজা হলেও রাহুল জামিন পেয়েছেন। তাঁকে আপিলের সুযোগ দিতে রায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
সংসদ সদস্যপদ বাতিল হওয়ার পর রাহুল বলেছেন, তিনি দেশের মানুষের জন্য লড়াই করছেন। এ জন্য যে কোনো মূল্য পরিশোধ করতে তিনি প্রস্তুত।
সংসদের সিদ্ধান্তের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কঠোর সমালোচনা করেন রাহুলের ছোট বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কংগ্রেসের এ নেত্রী বলেন, ‘আপনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন– কেন আমরা নামে নেহরু লিখি না। তখন কোনো বিচারক তো আপনাকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেননি।
সংসদ থেকেও আপনাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি।’ রাহুলকেও যে অনেক সময় কঠোর ভাষায় কটাক্ষ করা হয়েছে, তার উদাহরণ তুলে ধরেন প্রিয়াঙ্কা। একাধিক টুইটে তিনি বলেন, ‘মোদিজি, আপনার ধান্দাবাজরা শহীদ এক প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে বিশ্বাসঘাতক, মীরজাফর বলেছেন। আপনার এক মুখ্যমন্ত্রী তো রাহুলের পিতৃপরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।’
মোদির কড়া সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক টুইটে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির নতুন ভারতে বিরোধী দলের নেতারা বিজেপির প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। যখন মন্ত্রিসভায় অপরাধের রেকর্ডধারী বিজেপি নেতাদের যুক্ত করা হচ্ছে, তখন মতপ্রকাশের জন্য বিরোধী নেতাদের অযোগ্য ঘোষণা করা হচ্ছে।’ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গণতন্ত্র আর ভারত এখন এক বিপরীতধর্মী মত। গণতান্ত্রিক ভারত এখন সোনার পাথরবাটির মতোই।
মমতার কট্টর বিরোধী হলেও রাহুল ইস্যুতে এক নৌকায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বিজেপিকে তিরস্কার করে টুইটারে তিনি লিখেছেন, বিরোধী নেতাদের কোণঠাসা করতে বিজেপি এখন ফৌজদারি মানহানির পথ নিচ্ছে, যা নিন্দনীয়। যেমনটা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে করা হলো।
কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এক টুইটে বলেন, আদানির মহা কেলেঙ্কারির তদন্তের জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন না করে রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্যপদ খারিজ করা হলো। ভারতীয় গণতন্ত্র ওম শান্তি। দলটির প্রবীণ নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং বলেন, বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা ছিল। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট ও আদানি ইস্যুতে সংসদে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন রাহুল গান্ধী। তাই তাঁকে সংসদ থেকেই সরিয়ে দেওয়া হলো। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মানুষ সিংভি বলেন, রাহুল গান্ধী সংসদের ভেতর ও বাইরে নির্ভীকভাবে কথা বলেন। পরিষ্কারভাবে তিনি এ জন্য মূল্য দিচ্ছেন। সরকার নড়বড় করছে। তাঁর মুখ বন্ধ করার জন্য সরকার নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করছে। তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে আমরা বিজয়ী হবো। কংগ্রেসের আরেক নেতা হরিষ রাওয়াত বলেন, এটা দেশের টার্নিং পয়েন্ট। দেশ গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে অবশ্যই জিতবে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইটে লেখেন, লোকসভা থেকে রাহুলকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত। কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। গোটা দেশে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। ওদের (বিজেপি) অহংকার চূর্ণ করতে ১৩০ কোটি মানুষকে জোটবদ্ধ হতে হবে। ডিএমকের সংসদ সদস্য কানিমোঝি লেখেন, রাহুলকে লোকসভা থেকে অযোগ্য ঘোষণা প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ। এভাবেই তারা বিরোধীদের চুপ করাতে চায়।
সংসদ সদস্যপদ বাতিলের কঠোর সমালোচনা করেছেন মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধভ ঠাকরে। তিনি বলেন, ‘চোরকে চোর বলাটা এখন আমাদের দেশে অপরাধ। চোর ও লুটেরারা মুক্তভাবে ঘুরছে, আর রাহুলকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এটা দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা ছাড়া কিছু নয়। সরকারের সব স্তর চাপের মধ্যে রয়েছে। এটা একনায়কতন্ত্রের শেষের শুরু।’
তবে সংসদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। দলটির নেতারা বলছেন, রাহুল একজন স্বভাবসিদ্ধ অপরাধী। কংগ্রেস একটি পৃথক আইপিসি (ইন্ডিয়ান পেনাল কোড) চায়। এটা তাদের সামন্তবাদী চিন্তার প্রতিফলন।
রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্যপদ বাতিলের খবর ছড়িয়ে পড়লে ভারতের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ করেন কংগ্রেস সমর্থকরা। তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তোলেন।
রাহুলকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ চলাকালে কংগ্রেস নেতা ডিকে শিবকুমারসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন