কলকাতায় পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে শুক্রবার। আর প্রথম রোজা থেকে ‘মিনি বাংলাদেশ’ খ্যাত কলকাতার নিউ মার্কেটে বাংলাদেশিদের ভিড় বেড়েছে। এছাড়া কোয়েস্ট মল, বড়বাজারসহ বিভিন্ন বড় বড় শপিংমলে বাংলাদেশিদের ভিড় দেখা যায়। মূলত ঈদের কেনাকাটাকে সামনে রেখেই এ ভিড় বেড়েছে। এদিকে, অতিরিক্ত ভিড়ের জেরে কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় দেখা দিয়েছে হোটেল সংকট। ছোট রুম পাওয়া গেলেও ভাড়া চাওয়া হচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ। 

সীমান্তের ভোগান্তি পেরিয়ে সস্তায় ভালো কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশ থেকে সড়ক, রেলপথ ও আকাশপথে প্রতিদিন ভারতে আসেন প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক। গেল কয়েকদিনে এ সংখ্যাটা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এদের একটা বড় অংশ কলকাতায় পা রেখেই উঠেন মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায়। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়ছেন তারা। আর ন্যায্যমূল্যে হোটেল, কেনাকাটা বা খাওয়া-দাওয়ার জন্য নিউ মার্কেট এলাকা বাংলাদেশিদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। 


কলকাতার পোশাক বিপণন প্রতিষ্ঠান ‘মিলনে’ কেনাকাটা করছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম। বাংলাদেশ ছেড়ে কেন কলকাতায় কেনাকাটা করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জহিরুল ইসলাম জানান, কলকাতার কাপড়ের গুণগত মান ভালো ও টেকসই। ফলে কলকাতায় থেকেই কেনাকাটা করি। কয়েকদিন পর মার্কেটে ভিড় বেড়ে গেলে কেনাকাটা করতে অনেক কষ্ট হবে। তাই একটু আগেই কেনাকাটা করে রাখছি।

ঢাকা থেকে আসা জাহিদ হাসান নামে এক পর্যটক বলেন, আমি মূলত চিকিৎসা করতে এসেছি। ভাবলাম এখান থেকে কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে যাই, তাই আসা। 

আরেক বাংলাদেশি মোহাম্মদ ইসরাফিল মিয়া শান্ত বলেন, মূলত পরিবার নিয়ে কলকাতায় এসেছি মেডিকেল চেকআপ করতে। স্ত্রী কলকাতা থেকে কেনাকাটা করতে চাইছে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে  কলকাতায় কেনাকাটা শুরু করেছি। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকেও তো কিনতে হতো, সেক্ষেত্রে কলকাতা থেকে কিনে নেওয়াই  ভালো।

শান্তর স্ত্রী রুনা বলেন, আমরা এসেছি ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু যেহেতু সামনে ঈদ, কেনাকাটা করতেই হবে। তাই ভাবলাম কলকাতা থেকেই কেনাকাটা করি। 

অন্যদিকে, প্রথমবার কলকাতায় এসে অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মিন্টু ফকিরের। কলকাতায় জায়গা না পেয়ে সোজা চেন্নাই চলে যান তিনি। 

ফকির বলেন, গত ১০ মার্চ আমরা যখন কলকাতায় আসি তখন হোটেলের সমস্যা ছিল। হোটেলের রুম না পেয়ে আমরা ফ্লাইটে চেন্নাই চলে যাই। পরে চেন্নাই থেকে ফের কলকাতায় আসার পর এবার আর অসুবিধা হয়নি। হোটেলের রুমে পাওয়া গেছে, কেনাকাটাও করেছি।

কলকাতা এসেছেন আড়ংয়ের সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার নাসিরাল হোসেইন। তিনি জানান, নিউ মার্কেট এলাকায় অন্তত ৩০ হোটেল দেখেছেন তিনি। পরে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে হোটেল পান নাসিরাল। 

তিনি বলেন, গত ১৫ মার্চ কলকাতায় আসি। হোটেলে অনেক সমস্যা হয়েছিল, প্রায় ৩০টার মতো হোটেল দেখেছি। অতিরিক্ত বকশিশ দিয়ে, ভাড়া বাড়িয়ে অবশেষে একটি রুম পেয়েছি। 



তিনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর খাবারের দাম কিছুটা বেশি। তবে খাবারের মান বেশ ভালো। 

ফরিদপুরের বাসিন্দা সুলতান খান জানান, বৃহস্পতিবার তার এক বন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা হোটেল পাওয়া যায়। কিন্তু ১২০০ রুপির বদলে ১৮০০ রুপি গুনতে হয়েছে।

শওকত হোসেন নামে অন্য এক পর্যটক বলেন, হোটেলে প্রচণ্ড ভিড় ও এই ভিড়টা মূলত বাংলাদেশিদের কারণেই। রমজানকে সামনে রেখে এত পরিমাণ বাংলাদেশি কলকাতায় কেনাকাটা করতে এসেছেন যে, জামা-কাপড়, জুতার দোকানে ঢুকার মতো পরিস্থিতি নেই। আমি অতিরিক্ত বকশিস দিয়ে হোটেলের রুম পেয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, ভিড় বাড়ালেই হোটেলের ভাড়া বাড়ে, খাবারের দাম বেড়ে যায়। 

এদিকে ভিড় বাড়ায় খুশি জামা-কাপড় বিক্রেতা ও হোটেল মালিকরা। তারা জানান, করোনার কারণে গত দুই বছরের বেশি সময় ব্যবসায় মন্দা ছিল, এবার তারা কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন। 

কলকাতার নিউ  মার্কেটের বস্ত্র বিপণন প্রতিষ্ঠান মিলনের কর্মকর্তা রাজেশ কুমার তিওয়ারি বলেন, আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশ বাংলাদেশি। বাকি ২০ শতাংশ স্থানীয়। তাদের কথা মাথায় রেখে পোশাকের বৈচিত্র্য আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, আগে শুধু ঈদ উপলক্ষেই বাংলাদেশে পর্যটকরা কলকাতায় আসতেন। তবে এখন দিন পাল্টেছে। বছরের বিভিন্ন সময়েই তারা আসেন এবং কেনাকাটা করেন। আশা করছি এবার গত বছরগুলোর তুলনায় বেশি বিক্রি হবে।