- আন্তর্জাতিক
- অলস পড়ে আছে সিনেমা হল তহবিলের হাজার কোটি টাকা
অলস পড়ে আছে সিনেমা হল তহবিলের হাজার কোটি টাকা

দেশে এক সময় সিনেমা হল চালানো অনেক ক্ষেত্রে লাভজনক ছিল। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সে অবস্থা এখন নেই। অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। যারা টিকে আছে তাদের ‘শো’ চালিয়ে লাভ দূরে থাক, আসলই উঠছে না। সিনেমা হলের এ দৈন্যদশা কাটাতে নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সরকারের পরামর্শে সহজ শর্তে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তহবিল গঠনের দু’বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ কোটি টাকা নিয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স। আর কেউ আবেদন পর্যন্ত করেনি। ফলে বাকি ৯৯৫ কোটি টাকার তহবিল পড়ে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। সহজ শর্ত, তুলনামূলক কম সুদ ও দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার পরও এ ঋণে আগ্রহ নেই কারও।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার ঋণ আবেদনের সময় বাড়ালেও সিনেমা হলের তহবিলের প্রতি কারও আগ্রহ নেই। তহবিল গঠনের পর ঋণ নেওয়ার জন্য প্রথমে ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে আবেদন করতে বলা হয়। পরবর্তী সময়ে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এর পরও সাড়া না পেয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। এ দফায় আবেদনের শেষ সময় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশীদ সমকালকে বলেন, ভালো সিনেমা হচ্ছে না। হলে দর্শক পাওয়া যায় না। ফলে সিনেমা হল সংস্কারের জন্য ঋণ নেওয়ার চাহিদা নেই। নতুন করে সিনেমা হল নির্মাণেও আগ্রহ নেই। ঋণ যত সহজ শর্তে ও কম সুদের হোক, তা তো ফেরত দিতে হবে। বিনিয়োগ করে রিটার্ন না এলে খেলাপি হতে হবে । যে কারণে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিনেমা হল সংস্কার ও নির্মাণে কম সুদে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোকে মাত্র দেড় শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে বিতরণের কথা। হলের অবস্থান মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৫ শতাংশ। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ নিতে পারবে ব্যাংক। নতুন সিনেমা হল স্থাপনে সর্বোচ্চ ১০ কোটি এবং বিদ্যমান হল সংস্কারে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ৮ বছরের জন্য এখান থেকে ঋণ নেওয়া যাবে।
রাজধানীর অন্যতম পুরোনো সিনেমা হল মধুমিতার কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ৫ শতাংশ সুদে কেন; বিনা সুদে দিলেও ঋণ নেব না। কারণ ঋণ নিলে আম-ছালা দুই-ই যাবে। দর্শকের অভাবে বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে মধুমিতা হল প্রায় দু’মাস বন্ধ ছিল। দর্শকের অভাবে শো চালালেই লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সিনেমা হল বাঁচাতে হলে সবাইকে উদার হতে হবে। এখানে ভালো গল্পের ছবি হচ্ছে না। আবার বাইরে থেকেও সিনেমা আনতে একটি পক্ষ বাধা দিচ্ছে। এখন উচিত ভারতসহ সার্কভুক্ত দেশের সিনেমা আনার অনুমতি দেওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, তহবিল গঠনের ঘোষণার শুরুর দিকে সিনেমা হল মালিকদের অনেকে খোঁজ-খবর নেন। তাঁদের ধারণা ছিল, সরকার এখান থেকে অনুদান হিসেবে টাকা দেবে। পরে যখন তহবিল গঠন করে ঋণের কথা বলা হয়েছে, তখন তাঁরা পিছিয়ে গেছেন। তিনি জানান, ঋণ না নেওয়ার কারণ জানতে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, এ ঋণের জন্য তারা গ্রাহকদের দিক থেকে কোনো আগ্রহ দেখছে না। পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি থেকে টাকা নিলে ব্যাংক আদায় করতে পারুক, না পারুক; মেয়াদ শেষ হলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা আদায় করে নেয়। যে কারণে ব্যাংকগুলোও এ ক্ষেত্রে গ্রাহক আকৃষ্ট করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ৯০-এর দশকে সিনেমা হলের ব্যবসা ছিল চাঙ্গা। দেশে তখন প্রায় ১৪শ সিনেমা হল ছিল। তবে দর্শকপ্রিয় সিনেমা তৈরি না হওয়াসহ নানা কারণে ধীরে ধীরে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ। বেশিরভাগ সিনেমা হল বন্ধ করে কোথাও মার্কেট, কোথাও বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সারাদেশে চালু সিনেমা হলের সংখ্যা নেমেছে ৫০-এর নিচে। অনেক জেলায় একটি হলও চালু নেই এমন বাস্তবতাও রয়েছে।
মন্তব্য করুন