ঈদ সামনে রেখে সাধারণত শবেবরাতের পরের দিন থেকে শাড়ি, থ্রি-পিস, পাদুকা ব্যবসায়ীদের পাইকারি কেনাকাটা শুরু হয়। চলে ১৫ রোজা পর্যন্ত। তবে এবার পরিস্থিতি যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। রমজান শুরু হলেও রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বেচাকেনা এখনও আশানুরূপভাবে হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই বছর করোনা মহামারির প্রভাবে লক্ষ্য অনুযায়ী বিক্রি ছিল কম। এবার করোনার ভয় নেই, কিন্তু বেচাকেনায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।

রাজধানীর ইসলামপুর, মিরপুর বেনারসি পল্লী, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়া মার্কেট ও ডেমরা তাঁতী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, শবেবরাতের পর থেকে নারীদের পোশাক বিক্রির পাইকারি মার্কেটে কেনাবেচার ধুম থাকে। এবার রোজার আগেই কেনাকাটা অল্পের মধ্যে শেষ করেছেন অনেক খুচরা ব্যবসায়ী। আবার কোনো কোনো মার্কেটে এখনও যা বিক্রি হচ্ছে, তা তুলনামূলক কম। রোজার ঈদ ঘিরে ব্যবসায়ীদের বেশি আশা থাকে। এবার বিক্রি শুরু হলেও টার্গেট পূরণ হয়নি।

বৃহস্পতিবার ডেমরা হাটসংলগ্ন দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার প্রতিনিধিরা তৈরি শাড়ি কয়েকজন পাইকারকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। বড় ফুল, তেরছা, বুটিদার, ঝালর, পান্না হাজার, ফুলওয়ার, তোরাদার ডিজাইনের জামদানির চাহিদা বেশি। ডেমরা তাঁত জামদানি ঘরের কর্ণধার আব্দুল করিম বলেন, বছরজুড়ে জামদানি শাড়ির চাহিদা থাকে। এবার টার্গেট ছিল হাজার পিস শাড়ি বিক্রি করব, গেছে মাত্র ৭০০ পিস। আরেক ব্যবসায়ী ময়নামতি জামদানি হাউজের স্বত্বধিকারী আব্দুল জলিল লালু বলেন, টার্গেট অনুযায়ী এবার জামদানি বিক্রি করতে পারিনি। ২ হাজার ৬০০ পিস শাড়ি বিক্রি হয়েছে।

বেচাকেনার অবস্থায় হতাশ কারিগররাও। নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের গন্ধকপুর, মইকলি, তেরাবো, বেইলর, কাজীপাড়া, মোগড়াপাড়ার বয়নশিল্পীরা জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে দিনে-রাতে খেটে শাড়ি বুনলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাননি। করোনার পরে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সুতার দাম বেড়েছে বেশি। পরিবারের সবাই মিলে কাজ করলেও আশানুরূপ লাভ হয় না।

মিরপুর ১১ নম্বর ঢালের পাশে ও ১০ নম্বর মসজিদের পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা বেনারসি পল্লীর দোকানগুলোয় অবশ্য এবার পাইকারি বিক্রি ভালো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে ‘সাপুরা’ শাড়ির চাহিদা বেড়েছে। এই শাড়ির দাম ২ হাজার দুই ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। বেনারসি পল্লী দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কাশেম বলেন, শবেবরাতের পর প্রতি সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ হাজার পিস শাড়ি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে বেশি বিক্রি হয়েছে সাপুরা শাড়ি। তবে এখন পর্যন্ত খুচরা বিক্রি কম।

নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, গাউছিয়া, ইসলামপুর, সদরঘাটের পাইকারি বাজার ঘুরে জানা যায়, রোজা শুরুর আগেই পাইকারি বেচাকেনা শেষ। সদরঘাটের লেডিস পার্ক মার্কেটের তালুকদার গার্মেন্টসের কর্ণধার সজীব তালুকদার বলেন, আশেপাশে পাঁচ শতাধিক কারখানায় থ্রি-পিস, টপস, টাইস, ল্যাগিংস, ফ্রক, গাউনসহ সব আইটেম তৈরি হয়। ঈদের বিক্রি ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।

ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ছয়টি দোকানে পাইকারি বিক্রি হয়। ‘পিনন’ নামক দোকানের বিক্রয়কর্মী মোবারক হোসেন বলেন, গত দুই বছর করোনা ছিল। তখন করুণ দশা পার করেছি। এবার জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় একই দশা। যেখানে ১০ রোজা পর্যন্ত বেচাকেনা হতো, সেখানে এবার রোজার আগেই শেষ। রোজার এক সপ্তাহ হতে চলল অথচ বিক্রি নেই বললেই চলে।