কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর লোকসভার সদস্যপদ বাতিল হওয়ার প্রতিবাদে আসামের বিধানসভায় কালো পোশাক পরে হাজির হয়েছিলেন দলটির সব বিধায়ক। বিধানসভার মূল প্রবেশপথে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভও করেন তাঁরা। বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়ার দাবি ছিল, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিধানসভায় রাহুল প্রসঙ্গে আলোচনা হোক। সরকার পক্ষ ও স্পিকার সে দাবি না মানায় বিধানসভায় হট্টগোল সৃষ্টি হয়। পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেয় দু’পক্ষ। স্পিকার বিশ্বজিৎ দৈমারি দু’বার ১৫ ও ২০ মিনিটের জন্য অধিবেশন মুলতবি করতে বাধ্য হন। বুধবারের এ ঘটনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে দুই কংগ্রেস এবং একজন স্বতন্ত্র বিধায়ককে বরখাস্ত করা হয়। খবর এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমসের।

আসামের বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হওয়ার পর স্পিকার বিরোধী দলনেতা শইকিয়াকে তাঁর নোটিশ উত্থাপনের অনুমতি দিয়ে প্রস্তাবের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে কথা বলতে বলেন। শইকিয়া জানান, ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হোক, যেখানে তাঁকে সংবিধান রক্ষা করতে অনুরোধ জানানো হবে। সংবিধান রক্ষার শপথ যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁরা সংবিধান রক্ষা করতে পারছেন না।

প্রস্তাবের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, এটা নজিরবিহীন, আমরা এখানে একটি বিচারিক বিষয়ে মতামত প্রকাশ করছি। আমি জানি, এখানে গোলমাল সৃষ্টি করার জন্য গত রাতে কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ সময় তিনি রাহুলকে ‘অপরিপক্ব রাজনীতিবিদ’ বলায় আরও ক্ষিপ্ত হয় কংগ্রেস । তাঁরা ‘রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকেন। বিজেপি পাল্টা ‘রাহুল গান্ধী মুর্দাবাদ’ ও ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দেয়। পরে স্পিকার কংগ্রেসের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ ও জাকির হুসেন শিকদার এবং রাইজর দলের বিধায়ক অখিল গগৈকে এক দিনের জন্য বরখাস্ত করেন।

পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের সময় আসামের মুখ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্যের জন্য রাজ্য বিধানসভায় বিশেষাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযোগ করে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় হট্টগোল সৃষ্টি নিয়ে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে অভিযোগ তোলেন, তা নিয়েই বিরোধিতা করেন তাঁরা। পরে হিমন্ত বিশ্ব ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করেন।

এদিকে রাহুলের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের আদালতে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক আইপিএল চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ২০১৯ সালে এক নির্বাচনী প্রচারণায় রাহুল বলেছিলেন, ‘সব চোরেরা কেন তাদের পদবিতে মোদি ব্যবহার করে? নিরাভ মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি।’ এ বক্তব্যের জন্যই তাঁকে মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন গুজরাটের একটি আদালত। তিনি ৩০ দিনের জন্য জামিন পেয়েছেন এবং এ সময়ের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন। তবে সাজার কারণে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন রাহুল। এ অবস্থায় নতুন করে আইনি জটিলতায় জড়াতে চলেছেন কংগ্রেস নেতা।

ললিত মোদি ‘পলাতক’ বলেও অভিযোগ করেছিলেন রাহুল। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ললিত এক টুইট বার্তায় বলেন, প্রায় প্রত্যেক গান্ধী সহযোগীকে বারবার বলতে শুনেছি, আমি নাকি ন্যায়বিচার থেকে পলাতক। কবে, কেন ও কীভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলাম? আমি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি নিশ্চিত, তাঁকে প্রমাণ নিয়ে আসতে হবে এখানে।

এদিকে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর মন্তব্য জানিয়েছে জার্মানি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের ‘গণতান্ত্রিক নীতি’ নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বার্লিনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কংগ্রেসের নেতা দিগ্বিজয় সিং। তিনি টুইট করেন, রাহুল গান্ধীর ওপর অত্যাচারের মাধ্যমে ভারতে কীভাবে গণতন্ত্র নিয়ে আপস করা হচ্ছে, তা দেখার জন্য জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ।