আদানি গ্রুপের ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু হয়েছে বলে শুক্রবার ভারতের বিএসই এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো চিঠিতে দাবি করেছে আদানি পাওয়ার। তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এখনও বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ (সিওডি) ঘোষণা করা হয়নি।

শুক্রবার ভারতের বিএসই এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো চিঠিতে আদানি পাওয়ারের কোম্পানি সেক্রেটারি দীপক এস পাণ্ডের স্বাক্ষর রয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত প্রতিটি ৮০০ মেগাওয়াট করে দুই ইউনিটের আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছে। এতে আরও বলা হয়, আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড)-এপিজেএল ২৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) অনুসারে প্রথম ইউনিট থেকে নিট ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ৬ এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু করেছে। দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও শিগগির শুরু হবে বলে চিঠিতে জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আদানির বিদ্যুতের বাণিজ্যিক সরবরাহের তারিখ এখনও ঘোষিত হয়নি। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, সিওডি এখনও ঘোষণা করা হয়নি। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ আসছে। আদানির প্রস্তুতি রয়েছে। যথাসময়ে তারিখ ঘোষণা দেওয়া হবে।

পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, গত দু’দিনে গড়ে ঘণ্টাপ্রতি ৭২০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে আদানি। গত ৯ মার্চ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী একটানা ৭২ ঘণ্টা পূর্ণ সক্ষমতায় বা লোডে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে হয়। তারপর ঠিক হয় ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপিত ক্ষমতা বা প্রকৃত ক্ষমতা কত। এরপরই শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ। পিডিবির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আদানির কেন্দ্রটির এই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ নিতে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটারের একটি সঞ্চালন লাইন করা হয়েছে। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে বগুড়ায় আসছে। বাংলাদেশ অংশে সঞ্চালনের দায়িত্বে রয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।

প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৪ টাকা: গত ২ এপ্রিল আদানির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, তাদের বিদ্যুতের দাম বেসরকারি খাতের অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের (আমদানিকৃত কয়লা, এলএনজি ও তরল জ্বালানি ব্যবহার করে) তুলনায় কম হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক ও সাশ্রয়ী হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্চ মাসের প্রেক্ষাপটে প্রতি টন কয়লার দাম অস্ট্রেলিয়ান গ্লোবাল কোল নিউ ক্যাসেল (জিসিএনসি) সূচকে ১৮৭ মার্কিন ডলার এবং ইন্দোনেশিয়ার সূচকে (এইচবিএ) ১৯৭ মার্কিন ডলার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। এই হিসাবে ৬ হাজার ৩৩২ কিলোক্যালরির তাপমানের কয়লার গড় ইনডেক্স ব্যয় হবে ১৯২ মার্কিন ডলার। গড্ডা চুল্লির জন্য প্রয়োজনীয় ৪ হাজার ৬০০ কিলোক্যালরির তাপমানের কয়লার আনুপাতিক খরচ দাঁড়াবে ১৩৯ মার্কিন ডলার। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ যুক্ত হবে। এ হিসেবে গড্ডা কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হতে পারে ৯.৩৯ ইউএস সেন্ট এবং ক্যাপাসিটি চার্জ হতে পারে ৪.২৪ ইউএস সেন্ট । অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে ১৩.৩৬ সেন্ট  যা বাংলাদেশি টাকায় হবে প্রায় ১৪.১৮ টাকা।

আদানির বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের রামপাল, মাতারবাড়ী এবং এস আলম কেন্দ্রের চেয়ে আদানির বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রামপাল থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আছে শুধু পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র।