৭০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার মতো উদীয়মান একটি দেশকে কী কারণে নিজেদের ইতিহাসের ভয়াবহতম সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে এবং সংকট কতটা গভীর তার একটি ধারণা দিল দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের মানুষ তাদের আয় দিয়ে খাদ্য থেকে জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে দেখানো হয়েছে তা।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বেশ কিছু সহজাত দুর্বলতা’ এবং ‘নীতিগত ত্রুটিই’ দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। খবর বিবিসির

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু হতাশার কথাই নয় বরং আশার বাণীও শুনিয়েছে। বলেছে, আগামী বছর থেকে দেশটির অর্থনীতি ফের প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসবে বলে তারা প্রত্যাশা করছে।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমান অনুযায়ী, এ বছর দেশটির অর্থনীতি আরও ২ শতাংশ সংকুচিত হবে। তবে তারা আশা করছে, ২০২৪ সাল নাগাদ অর্থনীতি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পূর্বানুমান অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বানুমানের তুলনায় বেশ খানিকটা আশাবাদী।

আইএমএফের পূর্বানুমান অনুযায়ী, ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতি এ বছর আরও প্রায় ৩ শতাংশ সংকোচনের মধ্য দিয়ে যাবে এবং আগামী বছর ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা তাদের প্রতিবেদনে আরও দেখিয়েছে কীভাবে গত বছর সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি প্রায় ৭০ শতাংশে পৌঁছে যায়। সেখানে তাজা ফল, গম ও ডিমের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ওই সময়ে পরিবহন ব্যয় এবং বিদ্যুৎ ও পানির মতো জরুরি ইউটিলিটি খরচ এমনকি আরও দ্রুত গতিতে বেড়েছে।

গত বছর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয় এবং ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর প্রথমবারের মতো দেশটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে। যে কারণে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজার থেকে ঋণ পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

চীনের কাছে শ্রীলঙ্কার দেনা প্রায় ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার এবং ভারতের কাছে দেনা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে উভয় দেশ তাদের ঋণ পুনর্গঠনে রাজি হয়েছে এবং ঋণ শোধের জন্য শ্রীলঙ্কাকে আরও সময় দিয়েছে। এ ছাড়া, গত মাসে আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে।

আগামী সেপ্টেম্বরে আইএমএফ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার আগে শ্রীলঙ্কা সরকার বর্তমানে তাদের বন্ডহোল্ডার এবং ঋণদাতাদের সঙ্গে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা করছে।