ব্যাংককের সবচেয়ে ব্যস্ত রাস্তা সুকুমভিট রোডের নিয়নসাইনগুলোর মধ্যে নতুন একটি প্রতীক দেখা যেতে শুরু করেছে। সবুজ উজ্জল গাঁজা পাতার ওই ছবিটি বুঝিয়ে দিচ্ছে গত জুন মাসে গাঁজাকে থাইল্যান্ডে বৈধ করার পর থেকে এ সম্পর্কিত নানা ব্যবসার বিস্তার শুরু হয়েছে। খবর বিবিসির

ব্যাংককের বেশিরভাগ ওষুধের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে শক্তিশালী গাঁজা ফুলের কুঁড়ি এবং ধূমপানের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এমনকি সেখানে ব্যাকপ্যাকার ভ্রমণকারীদের প্রিয় জায়গা খাও স্যান রোডে গাঁজা কেন্দ্র করে পুরো একটা শপিং মল তৈরি হয়েছে।


থাইল্যান্ডের ওয়েড ওয়েবসাইটে চার হাজারের বেশি ব্যবসায়ী তালিকাভুক্ত রয়েছেন যারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাঁজা এবং এ থেকে তৈরি নানারকম পণ্য বিক্রি করেন।

অথচ গত বছরের জুন মাসের আগে পর্যন্ত থাইল্যান্ডে গাঁজা ছিল অবৈধ। কারও কাছে গাঁজা পাওয়া গেলে পাঁচ বছরে কারাদণ্ড এবং কেউ গাঁজা উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকলে ১৫ বছরের কারাদণ্ডের আইন ছিল।

এলভেটেড এস্টেট নামক গাঁজা শিল্প সংসদীয় কমিটির সঙ্গে মিলে গাঁজা সংক্রান্ত নতুন বিধি তৈরি করেছে। তাদের একজন কিটি চোপাকা বলেন, ‘অগোছালো হলেও এটা থাইল্যান্ড। আকস্মিকভাবে এই উদারতার ঘটনা না ঘটলে মনে হয় না গাঁজার এরকম ব্যাপক বিস্তারের ঘটনা ঘটতো।’


বর্তমানে ব্যাংককে এমন অনেক রেস্তোরাঁ রয়েছে যেখানে গাঁজা দিয়ে তৈরি নানারকম খাবার বিক্রি করা হয়। সেখানে গাঁজার চা এবং গাঁজার আইসক্রীমও পাওয়া যায়। কিছু কিছু দোকান একনকি গাঁজাযুক্ত খাবার পানিও বিক্রি করে।

ব্যাংককের দোকানগুলো বলছে, তাদের বেশিরভাগ ক্রেতা থাই নয়, বরং বিদেশি পর্যটক। থাইদের মধ্যেও যারা নিয়মিত গাঁজা সেবন করে এবং এর বৈধতাকে সমর্থন করে, তাদের সংখ্যাও একেবারে কম নয়।

এদের একজন আমান্দা। তিনি খুবই খুশী যে, পুলিশের কোনরকম ভয়ভীতি ছাড়াই নিজের বাড়িতেই পছন্দের জাতের গাঁজার চাষ করতে পারছেন। তিনি নিজের ছোট অ্যাপার্টমেন্টকে গাঁজার বাগান বানিয়ে ফেলেছেন। তার বেডরুমের বারান্দায় প্রতিফলিত তাবু টাঙ্গিয়ে এবং শক্তিশালী আলোর ব্যবস্থা করে সাতটি গাঁজা গাছ লাগিয়েছেন। এখন তার বেডরুমে তার বেড়ালকেও ঢুকতে দেয়া হয় না।

গাঁজার এরকম নাটকীয়ভাবে ফুলেফেপে ওঠা ব্যবসার বিষয়টি অনেক থাইয়ের কাছে বিস্ময়কর, কারণ তারা বরাবরই সব ধরনের মাদকদ্রব্যকে বিপজ্জনক সামাজিক ক্ষতিকর হিসাবে দেখে আসছে।

উত্তর থাইল্যান্ডের পাহাড়ি উপজাতিগুলোর এলাকায় ১৯৭০ এর শেষভাগ পর্যন্ত ব্যাপকভাবে গাঁজার চাষাবাদ করা হতো। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আফিম উৎপাদনের এলাকা গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের কাছাকাছি ওই এলাকা। উত্তর পূর্ব থাইল্যান্ডে ভেষজ এবং রান্নার উপাদান হিসাবেও গাঁজা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতো।