ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন দলটির শীর্ষ নেতা শারদ পাওয়ার। মুম্বাইতে নিজের আত্মজীবনী প্রকাশ অনুষ্ঠানে আজ মঙ্গলবার এই বিস্ফোরক ঘোষণা দেন মহারাষ্ট্রের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী শারদ পাওয়ার। মহারাষ্ট্র তথা গোটা ভারতীয় রাজনীতিতে বিরোধী নেতা হিসেবে যথেষ্ট প্রভাবশালী তিনি। তার এমন ঘোষণায় স্বভাবতই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মারাঠা রাজনৈতিক মহলে। তবে সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন না বলেও জানিয়ে দেন। 


আত্মজীবনী প্রকাশ অনুষ্ঠানে আচমকাই শারদ পাওয়ার বলেন ‘আমি এনসিপির সর্বভারতীয় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আমি জানি কোন সময়ে থামতে হয়। একজনের লোভী হওয়া উচিত নয়।’ 

আচমকা এমন ঘোষণায় এ সময় অডিটোরিয়ামে এনসিপি কর্মী-সমর্থকরা স্তম্ভিত হয়ে যান। তৈরি হয় নাটকীয় পরিস্থিতি। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক নেতাকর্মী। তিনি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে চলেছেন তা আন্দাজ করতে পারেননি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে কর্মী সমর্থকরাও। এমন অবস্থায় উপস্থিত সমর্থক ও নেতাকর্মীরা তাকে এই সিদ্ধান্ত বদলের অনুরোধ করতে থাকেন। অনেকেই বলতে থাকেন তিনি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে তারা ওই জায়গা ছেড়ে যাবেন না। তবে শারদ পাওয়ার নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন।

এদিকে শারদ পাওয়ার পদত্যাগ করায় দলটির পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, তাই নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। তার পদত্যাগের পর দলের নেতৃত্ব মেয়ে সুপ্রিয়া সুলের কাছে যায় নাকি ভাতিজা অজিত পাওয়ার দলের সভাপতি হন- এখন সেদিকে নজর সবার। তবে তিনি জানিয়েছেন, এ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে যে তার অবর্তমানে কে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হবেন। 

সভাপতি নির্বাচনের কমিটিতে থাকবেন- প্রফুল প্যাটেল, সুনীল তাটকরে, কেকে শর্মা, পিসি চাকো, অজিত পাওয়ার, জয়ন্ত পাতিল, সুপ্রিয়া সুলে, ছগান ভুজবল, দিলীপ ওয়ালসে পাতিল, অনিল দেশমুখ, রাজেশ টোপে, জিতেন্দ্র আওহাদ, হাসান মুশরিফ, ধনঞ্জয় মুন্ডে, জয়দেব গায়কওয়াড়।  কমিটিতে থাকবেন জাতীয়তাবাদী মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি ফৌজিয়া খান, জাতীয়তাবাদী যুব কংগ্রেসের সভাপতি ধীরজ শর্মা, জাতীয়তাবাদী যুব কংগ্রেস এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্র কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া দুহান। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের ধারণা, তার ভাতিজা অজিত পাওয়ারই দলের পরবর্তী সুভাপতি হতে চলেছেন। এনসিপির আগামী প্রেসিডেন্টের নাম কবে ঘোষণা হবে, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি। 

১৯৯৯ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কিছু মতভেদের কারণে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হন শারদ পাওয়ার। এরপর পি এ সাংমা, তারিক আনোয়ারকে সঙ্গে নিয়ে এনসিপি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ক্রমে হয়ে উঠেন জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপিবিরোধী জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস, শিবসেনা ও এনসিপিকে নিয়ে মহা বিকাশ আঘাড়ি সরকার গড়ার পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল শারদ পাওয়ারের।

তবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মহা বিকাশ আঘাড়ি (এমভিএ) জোটের শরিকরা যৌথভাবে লড়াই করবে কিনা, তা নিয়ে কিছুদিন আগেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন শারদ পাওয়ার। তার মধ্যে গত ১০ এপ্রিল এনসিপির জাতীয় দলের মর্যাদা বাতিল করে ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এরপরই তার পদত্যাগ নিয়ে বাড়ে বিভিন্ন পক্ষের আলোচনা।

যদিও শরদ পাওয়ার এদিন বলেন, ‘রাজ্যসভায় আমার মেয়াদ এখনও তিন বছর বাকি। তারপর আমি আর নির্বাচনে লড়াই করব না। এই তিন বছরে আরও বেশি করে দেশ এবং রাজ্যের হিতে কাজ করে যাব। নতুন কোনও দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছে আর নেই।’ সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের সঙ্গেই থাকব।’

তিনি বলেন ‘১৯৬০ সালের ১ মে মহারাষ্ট্র গঠন হয়। যশবন্ত রাও চহ্বানের নেতৃত্বে রাজ্য গঠন হয়। আমি সেদিনই পুণে যুব কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হই। ১৯৬৬ সালে বারামতি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে আমি কংগ্রেসের টিকিটে লড়াই করি। ২৭ বছর বয়সে আমি বিধায়ক নির্বাচিত হই। বিগত ৬ দশক ধরে মহারাষ্ট্র এবং আপনারা সবাই আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিগত ৫৬ বছরে আমি বিধানসভা, বিধান পরিষদ, লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্য থেকেছি। চারবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি। এছাড়া কেন্দ্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছি। ১৯৯৯ সালে এনসিপি গঠনের পর থেকে আমি দলের সভাপতি। ২৪ বছর ধরে আমি এই পদে আছি। তবে আমি বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত। আমার সময় হয়েছে। এখন এই সব সংগঠনের দিকে বেশি মন দেব আমি। সময় হয়েছে নতুন প্রজন্ম এই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

শারদ পাওয়ারের এই ঘোষণার পরই কান্নায় ভেঙে পড়েন একাধিক দলীয় নেতা। এনসিপি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্যানেলের সদস্য প্রফুল্ল প্যাটেল জানান, আগে থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেউ জানতেন না।