- আন্তর্জাতিক
- এপ্রিলে একসঙ্গে কমল রপ্তানি ও রেমিট্যান্স
এপ্রিলে একসঙ্গে কমল রপ্তানি ও রেমিট্যান্স

মার্চের মতো এপ্রিলেও পণ্য রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। ঈদের মাস হলেও এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ উপায়ে পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্স কম এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি উৎসের সর্বশেষ এ পরিস্থিতি ডলারের সরবরাহের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি টাকার বিপরীতে ডলারের দর আরও বেড়েছে এবং ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে রয়েছে।
রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এক সপ্তাহের বেশি কারখানা বন্ধ ছিল। কোনো কোনো কারখানায় মে দিবস পর্যন্তও বন্ধ ছিল। এতে গড়ে আট দিন উৎপাদন ও রপ্তানি হয়নি। তবে তাঁরা মনে করেন, সার্বিকভাবে রপ্তানিতে ধীরগতি চলছে, যার প্রধান কারণ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের প্রভাব।
ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, এপ্রিলসহ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সার্বিকভাবে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। অবশ্য গত ১০ মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ৯ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৮ কোটি ডলারের পোশাক। তবে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, একক মাস এপ্রিলে পোশাকের রপ্তানি কমেছে ১৫ শতাংশ। গত মাসে ৩৩৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। গত বছরের এপ্রিলে ছিল ৩৯৩ কোটি ডলার।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সমকালকে বলেন, ঈদের ছুটির কারণে এপ্রিলে বেশি হারে রপ্তানি কমেছে এটা ঠিক। তবে বড় ছুটি না হলেও রপ্তানি কম হতো। প্রায় পাঁচ মাস ধরেই পরিমাণের বিচারে রপ্তানি কমছে। মূল্যের বিবেচনায় রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। এখন মূল্যের সুবিধাও কমতে শুরু করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ, আমেরিকায় ভোগ চাহিদা কমছে। ক্রেতাদের শোরুম এবং ওয়্যারহাউসে অবিক্রীত পণ্য পড়ে আছে।
ইপিবির প্রতিবেদন বলছে, পোশাকের বাইরে প্রায় সব পণ্যের রপ্তানি কমেছে। গত ১০ মাসে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে ২৯ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ৭৪ কোটি ডলারের পণ্য। পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি কমেছে ২০ শতংশ। হিমায়িত এবং জীবন্ত সব ধরনের মাছের রপ্তানি কমেছে ২৬ শতাংশ। হোম টেক্সটাইলের কমেছে ২৯ শতাংশেরও বেশি। এ ছাড়া ওষুধ রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ।
ঈদের মাসেও রেমিট্যান্স কেন কমল : রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে সাধারণত ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়লেও এবার কমেছে। প্রকৃত তথ্য আড়াল করে কিছু ব্যাংক বাড়তি দরে ডলার কেনার বিষয়টি জানাজানির পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এরপর থেকে রেমিট্যান্স কমছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাঝে কয়েকটি ব্যাংক প্রবাসীদের কাছ থেকে ১১৩ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনছিল। যদিও এসব ব্যাংক কাগজে-কলমে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) নির্ধারিত ১০৭ টাকায় ডলার ক্রয় দেখিয়ে আসছিল। গত ১ এপ্রিল ব্যাংকের এমডিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় গভর্নর সতর্ক করে বলেন, বাড়তি দরে ডলার কেনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগতভাবে জরিমানা করা হবে। একই দিন বাড়তি দরে ডলার কেনায় যুক্ত ১০টি ব্যাংকের এমডিকে নিয়ে একজন ডেপুটি গভর্নর আলাদা বৈঠক করে সতর্ক করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্সের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বৈঠকে অংশ নেওয়া ১০টি ব্যাংকেই রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৩৭ কোটি ডলার বা ৪৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত এপ্রিলে ওই ১০টি ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ৪৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। আগের মাস মার্চে এসেছিল ৮৫ কোটি ডলার। সব ব্যাংক মিলিয়ে মার্চের তুলনায় যেখানে এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৪ কোটি ডলার বা ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর আগের বছরের একই মাস এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। এর মানে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় কমেছে ৩২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বা ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।
মন্তব্য করুন