- আন্তর্জাতিক
- অমর্ত্য সেনকে 'হেনস্থার' প্রতিবাদে শান্তিনিকেতনে পদযাত্রা-পথনাটক
অমর্ত্য সেনকে 'হেনস্থার' প্রতিবাদে শান্তিনিকেতনে পদযাত্রা-পথনাটক

অমর্ত্য সেনকে 'উচ্ছেদের হুঁশিয়ারি'র বিরুদ্ধে শান্তিনিকেতনে পদযাত্রা। ছবি-সংগৃহীত
জমি বিতর্কে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে 'উচ্ছেদের হুঁশিয়ারি'র বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও নাটকের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
শুক্রবার শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাসভবন 'প্রতীচী' সংলগ্ন মোড় থেকে বিশ্বভারতীর সমবায় ব্যাংক পর্যন্ত পদযাত্রা করে 'সামাজিক মর্যাদা রক্ষা কমিটি'। পরে রাস্তার ওপর 'রক্তকরবী' নাটক পরিবেশন করে প্রতিবাদ জানায় বিশ্বভারতীর আশ্রমিক, প্রাক্তনী ও কমিটির সদস্যরা।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই অভিযোগ দিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বস্তরে। তবে প্রয়াত পিতা আশুতোষ সেনের উইল অনুযায়ী উত্তরাধিকার সূত্রে জমি তারই বলে দাবি করেন অমর্ত্য সেন। ইতোমধ্যেই এই মর্মে সিউড়ি জেলা আদালত ও কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অধ্যাপক সেন। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট বিশ্বভারতীর জমি খালি করার নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
এত কিছুর পরও দিনের পর দিন অমর্ত্য সেনকে 'জমি দখলকারী', 'জমি কব্জাকারী' প্রভৃতি শব্দে আখ্যায়িত করে হেনস্থা করা হচ্ছে- এই মর্মে তার পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের ভূমিকার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের মানুষজন।
অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের হুঁশিয়ারির প্রতিবাদে 'প্রতীচী'র পাশে শিক্ষাভবন মোড় থেকে পদযাত্রা করেন 'সামাজিক মর্যাদা রক্ষা কমিটি'। কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে নাট্যকর্মী, সমাজকর্মী, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, শিক্ষাবিদেরা অংশ নেন মানববন্ধন কর্মসূচিতে। পদযাত্রায় পা মেলান শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক স্বপন ঘোষ, কুন্তল রুদ্র, সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যরা। উপাসনা গৃহের সামনের রাস্তা দিয়ে মিছিল শেষ হয় বিশ্বভারতীর সমবায় ব্যাংকের কাছে। সেখানে রাস্তার ওপর 'রক্তকরবী' নাটক মঞ্চস্থ করে প্রতিবাদ করেন নাট্যকর্মীরা।
পথনাটিকায় নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল। তিনি বলেন, শান্তিনিকেতন এখন যক্ষপুরী হয়ে উঠেছে। আমরা শিল্পীরা তো আমাদের শৈলী দিয়েই প্রতিবাদ করতে জানি। আমার মনে হয়, নন্দিনীর যক্ষপুরীতে রঞ্জনের আসা এবং ‘আয় রে ভাই, লড়ায়ে চল’— এটা বলার প্রয়োজন তৈরি হয়েছে। কারণ, অমর্ত্য সেনের অমর্যাদা করা যেতে পারে না।
এই কর্মসূচির আয়োজক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, আর কোন উপায় ছিল না। কয়েকদিন ধরে যে ভাষায়, যে ভাবে, যে ভঙ্গিমায় অমর্ত্য সেনকে অপমান করা হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না। তাই প্রতিবাদে সামিল হয়েছি।
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত প্রাক্তন উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, আদালতের রায় খুবই যথাযথ। এতে অমর্ত্য সেন অনেকটাই স্বস্তি পেলেন।
পাল্টা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা আদালতকে মর্যাদা দেই। ম্যাজিস্ট্রেট অমর্ত্য সেনের বাড়ির সামনে ১৪৫ ধারা জারি করেছে। তা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। সেই ধারা লঙ্ঘন করে কি করে এত মানুষ জমায়েত হয়ে কর্মসূচি করতে পারে? আইন কি শুধু বিশ্বভারতীর জন্যই?
এদিকে আগামীকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অমর্ত্য সেনের বাসভবনের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে বসবেন প্রায় ৭০ জন বাউল, তৃণমূল কর্মী, তৃণমূল পন্থী বুদ্ধিজীবীদের একাংশ। তাদের অবস্থানের কারণে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে এমন আশঙ্কা করে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য করুন