রাজধানীর ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কে গাছ কাটা বন্ধ ও নতুন গাছ লাগাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে আগামী ২১ মে রোববার নগর ভবন ঘেরাও করা হবে।

শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডি আবহানী মাঠের সামনে সাত মসজিদ রোডের সড়ক বিভাজকের গাছ কাটার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে শুক্রবার বিকেলে গাছ-পাখি-মানুষের শহরের দাবিতে 'সবুজ-সংহতি ও সবুজ-প্রাচীরের' শিরোনামে অনুষ্ঠানে প্রতিবাদ জানিয়েছেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। এ সময় বক্তৃতা, কবিতা আবৃত্তি, প্রতিবাদী গান ও গাছকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন তারা। 'ঘুমন্ত গাছে গায়ে করাত কেন?', ‘গাছ ও পাখির শহর চাই’, 'প্রকৃতিবান্ধব মেয়র চাই’— এমন অর্ধশত স্লোগান প্লেকার্ড দেখা গেছে সমাবেশ অংশগ্রহকারী শিশু-কিশোর বিভিন্ন বয়সের লোকজনের হাতে। ধানমন্ডি পুরো সড়কজুড়ে 'গাছ কাটা নিষেধ-আদেশক্রমে নগরবাসী' লেখা সংম্বলিত ব্যানার লাগিয়ে দেওয়া হয়।

সংহতি সমাবেশে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, উন্নয়ন মানে ধ্বংস করা না, উন্নয়ন মানে পিছিয়ে পড়া নয়। উন্নয়নের নামে গাছ কাটা হচ্ছে। উন্নয়ন বলতে তারা কী বোঝাতে চাচ্ছেন। গাছ কাটার বিরুদ্ধে আমরা এ জন্যই দাঁড়িয়েছি। কারণ গাছ আমাদের আশ্রয় দেয়, গাছ আমাদের ছায়া দেয়, গাছ আমাদের বেঁচে থাকার উপকরণ দেয়। গাছের নিজেরই বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, উন্নয়নের নামের গাছ কাটার পক্ষে নয় জনগণ। গাছ বিরোধী, জলাভূমি বিরোধী উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গির ফলাফল হবে ভয়াবহ। লড়াই চলবে। এই লড়াই কেবল গাছ কাটার বিরোধিতা নয়। এই লড়াই প্রকৃতি ও নাগরিকের ন্যায্যতার।

সাত মসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন,  গাছ কাটা বন্ধ করে কাটা গাছের স্থানে দেশি প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে। জনগণের করের টাকায় একবার গাছ লাগানো এবং আরেকবার গাছ কেটে আবার উন্নতমানের দ্রুতবর্ধনশীল গাছ লাগানোর নতুন প্রকল্প গ্রহণের নামে গাছ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। বৃক্ষ ও নগরবাসীবান্ধব সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে নগরের গাছ ও সবুজবলয় সুরক্ষা করতে হবে। নগর উন্নয়নে প্রকৃতিভিত্তিক পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

জীব ও পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী শিরিন হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুতফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সাংবাদিক অঞ্জন রায়, হাজারীবাগের বাসিন্দা শ্রমিকনেতা আকতার হোসেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীম আরাফাত মানব প্রমুখ।