- আন্তর্জাতিক
- শোকে নির্বাক স্বজনরা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
রুমায় সন্ত্রাসী হামলায় দুই সেনাসদস্য নিহত
শোকে নির্বাক স্বজনরা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

সেনাসদস্য তৌহিদুল ইসলামের লাশ রাজশাহীর বাগমারার নিজ বাড়িতে পৌঁছলে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা -সমকাল
পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সেনাবাহিনীর দুই সদস্য তৌহিদুল ইসলাম সাগর ও আলতাফ হোসেন মাসুমের পরিবারের স্বজনদের কান্না থামছে না। গ্রামের বাড়িতে লাশ পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাজশাহীর বাগমারা ও নোয়াখালীর নিজ নিজ গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁদের দাফন করা হয়। জানাজার আগে তাঁদের দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। গত মঙ্গলবার দুপুরে বান্দরবানের রুমায় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সদস্যদের সশস্ত্র হামলায় সেনাবাহিনীর এ দুই সৈনিক নিহত হন।
তৌহিদুলের মৃত্যুতে পরিবারের স্বপ্ন শেষ
রাজশাহীর বাগমারার নরদাস গ্রামের কৃষক মহসীন আলীর ছেলে তৌহিদুল। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ২০২১ সালে যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। সন্ত্রাসীদের বুলেট সে স্বপ্ন কেড়ে নিল। এ ঘটনায় শোকে নির্বাক তাঁর মা-বাবা। তাঁর শরীরে সন্ত্রাসীদের ছোড়া অন্তত ৩০টি গুলি ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন নরদাস ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার আবুল।
বাবা মহসীন আলী কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমরা গরিব। অনেক আশা নিয়ে ছেলে সেনাবাহিনীতে গিয়েছিল। কিছুই হলো না।’ মা নাসিমা বেগম বারবার বলছেন, ‘ছেলেকে ছাড়া আমি কীভাবে বাঁচব? আমি কোথায় যাব?’
দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট ছিলেন তৌহিদুল। বড় বোন মৌসুমী আক্তারের বিয়ে হয় কয়েক বছর আগে। মৌসুমী বলেন, ‘সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল। ছোট ভাই চাকরি পাওয়ার পর আশা ছিল, অভাব-অনটন দূর হবে। ভাই ধুমধাম করে বিয়ে করবে। কিছুই হলো না। আমাদের দেখার আর কেউ থাকল না।’
গ্রামের বাসিন্দা সলিমুদ্দিন, শহিদুল ইসলাম ও জালাল উদ্দীন বলেন, তৌহিদুল বেশ শান্ত স্বভাবের ছিল। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। এখন দেশের জন্য সে শহীদ হয়েছে। আমাদের গর্ব আরও বেড়ে গেল।
বাগমারার নরদাস ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার আবুল বলেন, ‘তৌহিদুলের শরীরে ৩০টির মতো গুলির দাগ ছিল। দেশ রক্ষা করতে গিয়ে সে শহীদ হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। এই পরিবারটির যে কোনো বিপদ-আপদে আমরা পাশে থাকব।’
গতকাল বিকেলে তৌহিদুলের জানাজা হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
তিন দিন আগে মাসুমের সঙ্গে মায়ের শেষ কথা
সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল নিহত আলতাফ হোসেন মাসুমকে গার্ড অব অর্নার ও রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। জানাজা শেষে গতকাল নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের পূর্ব লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন হয়। এর আগে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মাসুমের লাশ গ্রামের বাড়িতে এলে তার মা-বোন ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মাসুম সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের পূর্ব লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। মাসুমের বাবা আবুল কাশেম রেলগেট এলাকায় ডেকোরেশনের ব্যবসা করতেন। ২০১৭ সালে তিনি মারা যান।
বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন মাসুম। মা ও একমাত্র ছোট বোন সানজিদা সুলতানা মিমকে নিয়ে সংসার সাজানোর প্রত্যাশা ছিল তাঁর।
মাসুমের ছোট বোন সানজিদা বলেন, ‘গত বছর আমি এইচএসসি পাস করেছি। ভাইয়া আমাকে বলেছে, অনেক বড় হতে হবে। দেশের সেবা করতে হবে। এখন আমাদের ভবিষ্যতের কী হবে! মাকে নিয়ে আমি এখন কী করব?’
মাসুমের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসে মাসুম। ছুটি শেষে ২৬ এপ্রিল চাকরিতে চলে যায়। তিন দিন আগে শেষবারের মতো মাসুমের সঙ্গে আমার কথা হয়।’
মন্তব্য করুন