সমরেশ মজুমদারের বড় মেয়ে দোয়েল মজুমদার বলেছেন, বাবার হৃদয়ে বাংলাদেশ ছিল। ভীষণ পছন্দ করতেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের মিষ্টি বাবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল। আসলে বাংলাদেশের মানুষের আত্মীয়তা এবং আত্মীয়তার কোনো তুলনা হয় না। এটা একমাত্র পৃথিবীতে ওই দেশেই পাওয়া যায়। তাছাড়া আমাদের ভাষাও তো এক। যার ফলে বাবার কাছে সবসময় বাংলাদেশ প্রিয় ছিল।

রোববার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার জি ডি বিড়লা সভাঘরে ‘কালবেলা’র স্রষ্টা সমরেশ মজুমদারের স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় কথায় ও গানে স্মরণ করা হয় প্রখ্যাত এই কথাসাহিত্যিককে। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ভূমি ব্যান্ডের গায়ক সুরজিৎ চ্যাটার্জী ও পর্ণাভ।  

সভায় টলিউড অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমি অনেক ছোটবেলা থেকে সমরেশ দাদাকে চিনতাম। আমার মায়ের সঙ্গে খুব ভালো, মিষ্টি সম্পর্ক ছিল। আমরা ওদের বাড়িতে যেতাম উনিও আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমি যখন সংগ্রাম করা শুরু করলাম, ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছি তখন সমরেশদার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। তার বেশকিছু গল্প নিয়ে আমি কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনোভাবে সেটা হয়নি, সেটি হচ্ছে ‘অর্জুন’। যে ভাবেই হোক এই কাজটা শেষ করব।

কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে সমরেশ মজুমদারের লেখার ভক্ত ছিলেন। একজন মানুষ হিসেবে তিনি তার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। আসলে সমরেশ মজুমদার তার লেখার মধ্যে দিয়ে আমাদের সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত আদর্শবান একজন মানুষ ছিলেন এবং তিনি তার লেখার মধ্যে দিয়ে সেটি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। 

অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক বলেন, সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে পরিচয় আমার দীর্ঘদিনের। প্রায় ৩৫-৩৬ বছর হয়ে গেল। আমার সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ ‘নজরবন্দী’ ছবির মধ্যে দিয়ে। কাজের কারণে একসঙ্গে উত্তরবঙ্গের চা বাগানে কাটিয়েছিলাম। এছাড়া তার অসামান্য নাটক ‘তিন নম্বর চোখ’ এর জন্য একসঙ্গে আমেরিকা, কানাডা, লন্ডনে বহুদিন কাটিয়েছিলাম। বহু স্টেজ শো হয়েছিল। অনেকেই জানেন না সেখানে উনি অভিনয়ও করেছিলেন। অত্যন্ত সজ্জন, ভদ্রলোক রুচিসম্মত একজন মানুষ সমরেশ মজুমদার। তিনি ছিলেন আমাদের আড্ডার মধ্যমণি।

পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, সমরেশ মজুমদার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু অসংখ্য মানুষের স্মৃতিতে যেখানে বাঙালি আছেন, বাংলা পাঠক রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ হোক বা বাংলাদেশ, নর্থ আমেরিকা সর্বত্র ওর জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে ও অসংখ্য মানুষের স্মৃতিতে থেকে যাবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি সমরেশ মজুমদারকে চিরদিন মনে রাখবে। কী আর করা যাবে? আসলে এভাবেই চলে। আমাদের সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। কিন্তু স্মৃতিগুলো মানুষের মধ্যে থেকে যায়।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রেস সচিব রঞ্জন সেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায়, লেখক প্রচেত গুপ্ত, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য, সিপিআইএম নেতা রবীন দেব, সিপিআইএম নেত্রী রমলা চক্রবর্তী, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কবি সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক গৌতম ঘোষ, দুলাল লাহিড়ী, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রূপা গাঙ্গুলি, খেয়ালী ঘোষ দস্তিদার প্রমুখ। 


এদিন মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে সমরেশের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্টজনরা। কলকাতার ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের তরফেও ফুল দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানান প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ  দীপক দেবনাথ, আহ্বায়ক ভাস্কর সরদার, ক্লাব সদস্য ধৃমল দত্ত এবং তপন নস্কর।

গত ৮ মে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন সমরেশ মজুমদার। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। ১৯৪৪ সালের ১০ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির গয়রাকাটায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।