
ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার বেলগোরদ অঞ্চলে নজিরবিহীন নাশকতার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মস্কো। এ হামলার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধীদের দায়ী করেছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা। এর আগে হামলার ঘটনায় ইউক্রেনকে দায়ী করা হলেও কিয়েভ তা অস্বীকার করে। রুশ কর্মকর্তারা জানান, গতকাল মঙ্গলবার আকাশ থেকে বোমা ফেলে নাশকতাকারীদের দমনের চেষ্টা করা হয়েছে। অন্তত ‘৭০ নাশকতাকারী’ নিহত হয়েছে বলে তাদের দাবি। সহিংসতার জেরে ওই এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে বলেছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
সোমবার রুশ সীমান্তের ভেতরে বেলগোরদ অঞ্চলে ঢুকে হামলা চালায় একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লে. জেনারেল আইগর কনাশেনকভ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, হামলাকারীরা ইউক্রেনে পালিয়ে গেছে। তবে কয়েকজন থেকে যেতে পারে, এমন সন্দেহে চলছে অভিযান। ইউক্রেনে ১৫ মাস আগে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর বিচ্ছিন্নভাবে রাশিয়ার অভ্যন্তরে কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলার কোনোটিরই দায় স্বীকার করেনি কিয়েভ। তবে সীমান্তের অভ্যন্তরে ঢুকে এত বড় নাশকতার ঘটনা এর আগে দেখা যায়নি। বলা যায়, অনেকটা নতুন মোড় নিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
আল-জাজিরা জানায়, নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে রুশ বাহিনী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বেলগোরদ অঞ্চলের গভর্নর ভিচেস্লাভ গ্লাদকোভ জানান, মঙ্গলবার অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এলাকাজুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে। বিভিন্ন স্থানে হামলাকারীদের দমনে কোয়াডকপ্টার থেকে বিস্ফোরক ফেলা হচ্ছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বেলগোরদ এলাকায় রুশ বাহিনীর অভিযানে বিমান ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক মুখপাত্র জানান, প্রেসিডেন্ট পুরো বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। ঘটনার দায় অস্বীকার করে ইউক্রেন বলেছে, এতে রাশিয়ারই দুটি আধাসামরিক বাহিনী জড়িত।
গভর্নর ভিচেস্লাভ গ্লাদকোভ জানান, পরিস্থিতি ‘খুবই উত্তেজনাপূর্ণ’। সন্ত্রাসীদের খুঁজতে অভিযান চলছে। অভিযান পরিচালনাকারীদের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা পরিচয় যাচাই এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় নজরদারি করতে পারে। একটি ড্রোন থেকে তোলা ভিডিওতে বেলগোরদের দক্ষিণ সীমান্তের একটি চেক পয়েন্টের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া যান দেখা গেছে। এ ছাড়া হেলিকপ্টার ব্যবহার করে নজরদারি চালানো হচ্ছে। কিয়েভ দাবি করছে, এসব ঘটনার পেছনে রাশিয়ার লিবার্টি অব রাশিয়া লেজিওন ও দ্য রাশিয়ান ভলান্টিয়ার কর্পস জড়িত।
এদিকে সম্প্রতি ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেওয়ার ঘোষণা দেয় পশ্চিমারা। এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার ক্রেমলিন বলেছে, ইউক্রেনকে দেওয়া পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তা কোনো কিছুকে বদলে দেবে না। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনকে আধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ নিশ্চিতভাবে ঝুঁকি বাড়াবে।
রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভও একই সুরে কথা বলেছেন। রিয়া নভস্তিকে তিনি বলেন, ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলো থেকে যত বেশি ধ্বংসাত্মক অস্ত্র গ্রহণ করবে, ‘পারমাণবিক বিপর্যয়ে’র ঝুঁকি ততই বাড়বে। বেলগোরদে হামলা চালানোর কথা ইউক্রেনের অস্বীকারকেও ‘মিথ্যাচার’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। গতকাল মঙ্গলবার কাতার ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্তব্য করুন