'অপেক্ষা করেন, আরও অনেক মেয়ে খেলা ছেড়ে দেবে'

দুই দশক ধরে ছেলেদের ফুটবল যখন ট্রফির জন্য হাহাকার করছে, তখন নারীদের দিয়েই ট্রফির মুখ দেখেছে দেশের ফুটবল। লাল-সবুজের মেয়েরা দেশের হয়ে জিতেছে একের পর এক সোনালি ট্রফি। সেই নারী ফুটবলেই এখন দ্রোহের আগুন!

খেলা না থাকায় মানসিক অবসাদে শুক্রবার আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান নারী দলের অন্যতম সেরা তারকা সিরাত জাহান স্বপ্না। মেয়েদের এই হতাশা সহ্য করতে না পারা ছোটনও সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আর কাজ না করার। ১ জুন থেকে বাফুফের নারী দলের দায়িত্বে না থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ছোটন।

ফুটবল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত জাতীয় দলের মেয়েরা। মাঠে নিয়মিত ফুটবল নেই। শঙ্কা তৈরি হয়েছে বাফুফে ক্যাম্পে থাকা সব নারী ফুটলারের মধ্যেও। তাই তো মাত্র ২২ বছর বয়সেই ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দেন জাতীয় দলের অন্যতম সেরা তারকা সিরাত জাহান স্বপ্না। এর আগে বছরের শুরুতেই অভিমানে সাফজয়ী দল থেকে ঝরে পড়েন আনুচিং মোগিনি ও সাজেদা খাতুন। সব মিলিয়ে সাফজয়ী দলের তিন সদস্য ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন। 

নিজের অবসর নিয়ে স্বপ্না কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও কিছুদিন আগে ফুটবল ছেড়ে দেওয়া জাতীয় দলের আরেক নারী ফুটবলার সাজেদা খাতুন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফুটবলে মেয়েদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই বলে দাবি করেছেন সাজেদা। 

স্বপ্নার অবসর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সাজেদা বলেন, 'একটু অপেক্ষা করেন। আরও অনেক মেয়ে খেলা ছেড়ে দেবে।'

সাজেদা বলছেন, 'আমাদের দেশে নারী ফুটবলের কিছু আছে? আমি জিজ্ঞেস করতে চাই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নারী ফুটবলারদের কিছু দিয়েছে।' এখানে কোন আশা নাই।'

গেল বছর সেপ্টেম্বরে সাফের শিরোপা জেতার পর নারী ফুটবলারদের নিয়ে আকাশচুম্বি প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছিল সবাই। কিন্তু সেসব কথা রাখতে পারেনি বাফুফে। আর্থিক সংকটের নাটক সাজিয়ে গত মার্চে সাবিনাদের মিয়ানমার পাঠায়নি বাফুফে। সেপ্টেম্বরে নেপালে সাফ জেতার পর আর মাঠে নামা হয়নি সাবিনা-কৃষ্ণাদের। এ মাসেই মেয়েদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হওয়ার কথা বললেও তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কবে নাগাদ এ টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াবে, তা বলতে পারছেন না কেউই। 

সাজেদার প্রশ্ন, 'আমরা কেন ফুটবল খেলি। সারা জীবন শুধু ক্যাম্পই করব? সাফ জেতার পর ফুটবলারদের জন্য কিছুই আয়োজন করা হয়নি। আছি আমরা ফুটবলের জন্য, সেই ফুটবল খেলাই তো হয় না।'

বাফুফের খামখেয়ালির কারণে অলিম্পিক বাছাইয়ে মেয়েদের না খেলা প্রসঙ্গে সাজেদা বলেন, 'অলিম্পিক বাছাই পর্বে খেলার সুযোগ ছিল। ফেডারেশনের অবহেলায় সেটাও হয়নি। তাদের জিজ্ঞেস করে দেখেন, খালি এই সমস্যা, ওই সমস্যা বলবে। তাহলে কেন মেয়েরা আগামীতে ফুটবল খেলবে?'