- আন্তর্জাতিক
- ‘স্কুল শেষে আমাকে কেউ নিতে আসে না’
মায়ের ডাকের সমাবেশ
‘স্কুল শেষে আমাকে কেউ নিতে আসে না’
বিশ্ব গুম প্রতিরোধ সপ্তাহ
-samakal-647224fa3672a.jpg)
ছবি: ফোকাস বাংলা
‘আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। আমার বান্ধবীরা যখন বাবার সঙ্গে স্কুলে আসে তখন আমার খারাপ লাগে। স্কুল শেষে ওদের বাবারা ওদের নিয়ে যায়, আমাকে কেউ নিতে আসে না। আমার খারাপ লাগে। আমার একটা ছোট ভাই আছে সেও প্রতিনিয়ত বাবার জন্য কান্না করে।’ কাঁদতে কাঁদতে ফেরত পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছিল ১২ বছরের শিশু আদিবা ইসলাম হৃদি। দুই বছর বয়সে তার বাবা বংশাল থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর গত ১০ বছর ধরে নিখোঁজ তিনি। বাবার সঙ্গে মনে রাখার মতো কোনো সুন্দর মুহূর্ত নেই তার। নেই তেমন কোনো ছবিও। তাই বাবার হাত ধরে হাটছে- এমন একটা দৃশ্য কল্পনা করে নিজ হাতে আঁকা একটি ছবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে সে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে শনিবার এমনই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিশ্ব গুম বিরোধী সপ্তাহ উপলক্ষে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর আয়োজন করে। এ আয়োজনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পাটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম, নারী নেত্রী ফরিদা আক্তারসহ প্রমুখ বক্তব্য দেন। এতে অংশ নেন হৃদির মতো অনেক শিশু-কিশোর। সন্তানের খোঁজ চেয়ে এতে অনেক মা-ও অংশ নেন।
সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই সরকার এখন বেশ বিপদে আছে। দেশের মানুষের সমর্থন নেই। বিদেশেও সমর্থন কমে গেছে। ১৪ বছর যাবৎ গুম, খুন এবং গ্রেফতারসহ বিরোধী মতকে নানাভাবে দমন করছে। সারা দুনিয়ায় তাদের বদনাম হয়ে গেছে তারা একটি ফ্যাসিস্ট সরকার। তারা ভোটের বাক্স চুরি করে। দিনের ভোট রাতে করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বলছে- যারা ভোটে এ ধরণের কাজ করবে তাদের আর ভিসা দেওয়া হবে না। তখন সরকারের মধ্যে জ্বালা তৈরি হয়েছে। তারা বলছে- আমরা তো নির্বাচনে বাধা দিই না। আসলে তারা বাধা দেয় না। বরং নির্বাচন যেন না হয় তার জন্য গুম-খুন-হত্যা-নির্যাতন করে বিরোধীদের দমন করে নির্বাচনই হতে দেয় না। এখন ফরিয়াদ করে কোনো কাজ হবে না। এ সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার দিন আসছে। আমরা জানতে চাই আমাদের স্বজনরা কোথায়। তাদের হিসাব না দিয়ে সরকারকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে দেওয়া হবে না।’
আলোকচিত্রী শহীদুল আলম বলেন, ‘আমাকেও গুম করা হয়েছিল। রাতের অন্ধকারে আমাকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া হয়েছিল। হাত, মুখ, চোখ বেঁধে ফেলা হয়। আমার পরিবার থানায় অভিযোগ করতে গেলে অভিযোগও নেওয়া হয়নি। কিন্তু সবাই আওয়াজ তোলায় বেশিক্ষণ রাখতে পারেনি। আমি যে অপরাধ করেছি, সে অপরাধের বিরুদ্ধে পাঁচ বছরেও তারা চার্জশিট দিতে পারেনি। এখনও আমাকে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয়। আমার সামর্থ্য রয়েছে আমি আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারি, কিন্তু সবাই পারে না। বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ এভাবে গুম হয় তাদের কথা বলার কেউ থাকে না।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, বছরের পর বছর গুম ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু সরকারের এ বিষয়ে একটুও ভ্রুক্ষেপ নেই। বাবা হারানো শিশুদের গণমাধ্যমের সামনে কাঁদতে হয়। একটা সভ্য মানবিক দেশে এটা হতে পারে না। আমরা আমাদের শিশুদের কান্না দেখতে চাই না। কোনো মায়ের চোখের পানি আমরা দেখতে চাই না। তাই এসব মানুষকে অবলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে।’
মন্তব্য করুন