ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের এই যুগে তথ্য জমা রাখা আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে গেছ। তবে সেই তথ্যের দীর্ঘমেয়াদী অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে। এক ব্যক্তি অভিনব উপায়ে তথ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছেন। 

মার্টিন কুনৎসে পাহাড়ের গভীরে তার সম্পদের কক্ষের দিকে চলেছেন। সেখানে অবশ্য শুধু পাথর ও লবণ রয়েছে। তিনি জায়গাটির নাম রেখেছেন ‘মানবজাতির স্মৃতিভাণ্ডার'। খবর ডয়েচে ভেলের 

মার্টিন বলেন, ‘আমরা হালস্টাটে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো লবণ খনির মধ্যে রয়েছি। পুরানো এই পিট ট্রেনে করে প্রায় ৫০০ মিটার গভীরে চলেছি।'

আপার অস্ট্রিয়া অঞ্চলে এই পর্বতশ্রেণির নাম হিয়রলাৎস। অনেক শতাব্দী ধরে সেই এলাকা পাহাড়ের লবণের কারণে বিখ্যাত। প্রাচীন খনির পিট বা প্রবেশপথ ও সুড়ঙ্গগুলি মার্টিন কুনৎসের আর্কাইভ প্রোজেক্টকে সুরক্ষা দিচ্ছে।

তবে সেখানে প্রবেশ করলে কয়েকটি মাটির বাক্স ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়বে না। সেগুলির মধ্যেই প্রকৃত তথ্যভাণ্ডার লুকিয়ে রয়েছে। 

সেগুলি আসলে হার্ডওয়্যারের দোকানে কেনা সেরামিক টাইল, যার মধ্যে কুনৎসে লেখা ও ছবি অমর করে রাখছেন। কোনটা চিরকালের জন্য রেখে দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে তার নিজস্ব ধ্যানধারণা রয়েছে। মার্টিন কুনৎসে জানালেন, ‘আমরা হাতে গোনা কয়েকটি টাইল পাহাড়ের মধ্যে এনেছি৷ এবার সেগুলি বাক্সে পোরা হবে৷ এটা ১৯৫০-এর দশকের এক তালা কারিগরের শিক্ষানবিশের দিনপঞ্জির অংশ৷ আজকের তুলনায় সেই অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন ছিল বলে আমি সেটাকে অক্ষত রাখা উপযুক্ত মনে করেছি।'

কুনৎসে একাই বাছাইয়ের কাজ করেন না। মাসুলের বিনিময়ে তিনি যে কোনো মানুষের টেক্সট ও ছবিও সংরক্ষণ করেন। যেমন করোনা মহামারির সময় লকডাউনের দিনপঞ্জি অথবা পাকিস্তানের এক প্রাচীন নিদর্শন গবেষকের ডক্টরেট থিসিস, যেটি তিনি ডিজিটাল ক্লাউড ও সার্ভারে রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না।

 মার্টিন কুনৎসে বলেন, ‘আমরা যেমনটা ভাবছি, আমাদের ইন্টারনেট ও তথ্য সংরক্ষণ দুর্ভাগ্যবশত ততটা নির্ভরযোগ্য নয়৷ সেটাও এই আর্কাইভ সৃষ্টির আইডিয়ার অন্যতম কারণ। আমি আগামী প্রজন্মগুলির জন্য  তথ্য আরও ভালোভাবে রাখতে চাই, যাতে তারা নিজেদের অতীতে ঢুঁ মারতে পারে।'

কুনৎসের দাবি, তার টাইলগুলি ধ্বংস করা সম্ভব নয়৷ টাইলের সাদা গ্লেস কালার বডির সঙ্গে সংযুক্ত হয়৷ তারপর আবার শীতল হয়ে মসৃণ সারফেস সৃষ্টি হয়৷ সে কারণে সেটি এত টেকসই৷'

একটি কপি মার্টিনের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷ কয়েক দশকের মধ্যে একটি হিমবাহ গলে যাচ্ছে, তাতে সেটা দেখা যাচ্ছে৷ মার্টিন মনে করেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নথিকরন আর্কাইভের এক কেন্দ্রীয় উপাদান৷ জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য স্থায়ীভাবে জমা না রাখলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো টেরই পাবে না যে জলবায়ু পরিবর্তন আদৌ ঘটেছিল৷ সেই ঘটনার প্রকৃত মাত্রাও জানতে পারবে না৷'