- আন্তর্জাতিক
- ‘মৃত’ আসামিকে যেভাবে গ্রেপ্তার করল পুলিশ
‘মৃত’ আসামিকে যেভাবে গ্রেপ্তার করল পুলিশ
অপহরণ মামলা থেকে রেহাই পেতে নানা কৌশল, শেষ রক্ষা হলো না

নারী অপহরণ মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, তিনি মারা গেছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ-সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্রও দেন। তবে কিছু তথ্যে সন্দেহ হয় তদন্ত কর্মকর্তার। তিনি নানা উপায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যান। অবশেষে কাগজপত্রে ‘মৃত’ আসামি মজনু বিশ্বাসকে খুঁজে পাওয়া যায় ঝিনাইদহ সদরে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি বিস্মিত হয়ে পুলিশকে বলেন, ‘আ রে, আমি তো মারা গেছি! আমার খোঁজ পাইলেন কেমনে?’
অদ্ভুত এ ঘটনার শুরু হয় এক বছর আগে।
যশোরের শেখহাটি জামরুলতলা এলাকায় পাশাপাশি বাসায় ভাড়া থাকতেন মজনু বিশ্বাস ও ভুক্তভোগী নারী। এই সূত্রে তাঁদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে অভাবি পরিবারের মেয়েটিকে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়। রাজি হলে গত বছরের ১৭ মে তাঁকে যশোরের চৌগাছা সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে পাচার করা হয় ভারতে। এর পর দীর্ঘদিন মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে আদালতে পিটিশন মামলা করেন তাঁর বাবা। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই যশোর জেলা ইউনিটের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন সমকালকে বলেন, অপহরণের অভিযোগের তদন্তে নেমে দেখা যায়, পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছেন ভুক্তভোগী। চক্রের সদস্য মজনুর শ্যালক সোহাগ সরদার ভারতে অবস্থান করে। তার নির্দেশনায় এ দেশ থেকে নানা কৌশলে মেয়েদের পাচার করা হয়। পরে তাদের আটকে রেখে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে বাধ্য করে চক্রের সদস্যরা। এ মামলার ভুক্তভোগীকেও একই কায়দায় ৫০ হাজার রুপিতে ভারতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে তাঁর অবস্থান জেনে যশোরের জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার নামে একটি সংস্থার সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাঁর কাছ থেকেই জানা যায়, মজনু পাচারকারী চক্রের সদস্য।
পুলিশ সুপার জানান, মজনুর খোঁজে নড়াইলের লোহাগড়ায় গিয়ে জানা যায়, তিনি মারা গেছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের রেজিস্ট্রারে তা লিপিবদ্ধ আছে। তবে তাঁর মৃত্যুর স্থান নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। দেশে থাকা তাঁর প্রথম স্ত্রীসহ আত্মীয়স্বজনরা বলেন, ভারতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের পরিচিতজনরা জানেন, দেশে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এতে সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ায় এ নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যায় পিবিআই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই যশোরের এসআই মিজানুর রহমান বলেন, ভারত থেকে মজনুর চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকার একটি ছবি পাঠিয়ে তাঁর স্বজনদের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। সবাই সেটিই বিশ্বাস করেন। তবে সন্দেহ দূর না হওয়ায় পুলিশ খোঁজ নিতে থাকে। এক পর্যায়ে তাঁর ব্যবহৃত পুরোনো একটি মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া যায়। সেটির সূত্র ধরে প্রযুক্তিগত তদন্তে তাঁর অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়। পরে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় ঝিনাইদহ সদরের জোড়াপুকুর পাগলাকানাই সড়কের বাসা থেকে তাঁকে স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার করে পিবিআই। সেখানে তিনি রিকশাচালক হিসেবে এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মাজেদা খাতুন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা নারী পাচারে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, পাচার হওয়া মেয়েটির বাবা মামলা করেছেন জানতে পেরে নানারকম ফন্দি আঁটেন মাজেদ। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি পরিকল্পিতভাবে নিজের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছে দেন। সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে যান ঝিনাইদহে। পরে ভুক্তভোগীর বাবা তাঁদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ এপ্রিল তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে রয়েছেন।
মন্তব্য করুন