- আন্তর্জাতিক
- বাংলাদেশি শিশুর চিঠির জবাব চীনের প্রেসিডেন্টের
বাংলাদেশি শিশুর চিঠির জবাব চীনের প্রেসিডেন্টের
২০১০ সালে চীনা চিকিৎসকদের সহায়তায় জন্ম আলিফা চীনের

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত মার্চে আলিফা চীন ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং বিভিন্ন উপহার তুলে দেন -সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছ থেকে চিঠির জবাব পেয়ে উচ্ছ্বসিত চট্টগ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া আলিফা চীন। গত এপ্রিলে জিনপিংয়ের কাছে চিঠি লিখেছিল সে। সেই চিঠির জবাবে চীনা প্রেসিডেন্ট আলিফাকে কঠোর অধ্যয়ন, তার স্বপ্নপূরণ এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিতে উৎসাহিত করেছেন। পাশাপাশি তিনি আলিফার জন্মের ঘটনাকে দু’দেশের বন্ধুত্বের একটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী গল্প হিসেবে আখ্যায়িত করেন। গতকাল বুধবার ঢাকার চীনা দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল রাতে মোবাইল ফোনে চিঠি পাওয়ার আনন্দের কথা সমকালকে জানিয়েছে আলিফা। এর আগে গত সোমবার ঢাকার চীনা দূতাবাসে দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং তার হাতে প্রেসিডেন্টের চিঠির একটি কপি তুলে দেন। পরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলে কর্মরত চীনের কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টের চিঠিটি চায়নিজ, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় বাঁধাই করে তাদের বাসায় পাঠিয়েছেন।
আলিফা চীন আনোয়ার হোসেন ও জান্নাতুল ফেরদৌস দম্পতির প্রথম সন্তান। চট্টগ্রামের বিএএফ শাহীন কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সে। তার বাবা আনোয়ার হোসেন মেরিন ফিশারিজ একাডেমির কুক এবং জান্নাতুল ফেরদৌস নৌবাহিনী হাসপাতালের অফিস সহায়ক। তাঁদের আবিদুল ইসলাম নামে ১০ বছর বয়সী আরেকটি সন্তান রয়েছে। তাঁরা চট্টগ্রাম নগরের বন্দরটিলা এলাকার ভাড়া বাসায় থাকেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানার গন্ধর্ব্যপুর গ্রামে।
১ জুন বিশ্ব শিশু দিবসকে সামনে রেখে চিঠিতে আলিফার জন্মের গল্প দুই দেশের বন্ধুত্বের একটি ভালো উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন শি জিনপিং। চীনা প্রেসিডেন্ট স্মরণ করিয়ে দেন, এই অঞ্চলের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রাচীনকাল থেকেই। এই দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিনিময় চালু হয়েছিল হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে। ৬০০ বছরেরও বেশি সময় আগে চীনের মিং রাজবংশের নাবিক ঝেং হি এই অঞ্চলে দু’বার ভ্রমণ করেছিলেন এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বীজ বপন করেছিলেন। ওই ঘটনার ৬০০ বছর পর চীনা সামরিক চিকিৎসকদের সহযোগিতায় আলিফার জন্মের ঘটনাকে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের একটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী গল্প হিসেবে আখ্যায়িত করেন জিনপিং।
তিনি জানান, আলিফা বড় হয়ে চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বার্তা বাহক হতে চায় জেনে তিনি খুবই আনন্দিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আলিফা তার তারুণ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে এবং কঠোর অধ্যয়নের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও দেশের সেবা করতে সক্ষম হবে।
আলিফার বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে চীনের প্রেসিডেন্টকে লেখা আমার মেয়ের চিঠিটি বঙ্গবন্ধু টানেলের চীনা কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেই। দূতাবাসের মাধ্যমে চিঠিটি চীনের প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হয়। আলিফা তার মায়ের সিজার করা চিকিৎসককে ‘চীনা মা’ ডাকে। চিঠিতে সে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ার পাশাপাশি চীনা মায়ের মতো চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছার কথা জানায়।
আলিফা সমকালকে বলে, ‘চীনের মতো এত বড় একটি দেশের প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়ে জবাব পাব, এটা চিন্তাও করিনি। চিঠির জবাব পেয়ে খুব ভালো লাগছে। খবর শুনে সহপাঠী ও শিক্ষকরাও আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমি আমার চীনা মায়ের মতো বড় ডাক্তার হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।’
জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম সন্তান আলিফার জন্মের ঘটনা স্মৃতিচারণ করে জানান, ২০১০ সালে শেষের দিকে প্রথম সন্তান প্রসবের সময় তাঁর হার্টের অসুস্থতা ধরা পড়ে। তখন তিনি নৌবাহিনীর হাসপাতালের চিকিৎসক ফরিদুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কর্মরত। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, সেখানে তাঁর সন্তান প্রসব সম্ভব নয়, ঢাকায় যেতে হবে। হাসপাতালে তখন হার্টের কোনো চিকিৎসক এবং যন্ত্রপাতি ছিল না। সে সময় চীনা নৌবাহিনীর ভাসমান হাসপাতাল ‘দ্য পিস আর্ক’ চট্টগ্রামে আসে। ২০১০ সালের ১২ নভেম্বর নেভি হাসপাতালে চীনের চিকিৎসকরা তাঁর সিজার করেন। কৃতজ্ঞতা হিসেবে তাঁরা শিশুর নামের সঙ্গে চীন জুড়ে দেন।
তিনি বলেন, ‘মেয়ে বড় হলে জন্মের সময় আমার যুদ্ধের কথা শুনে সে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে চায়। ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট ঢাকায় এলে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে আমাদের পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় আর দেখা হয়নি।
গত ১৩ বছরে চীনা নৌ জাহাজগুলো বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেছে। প্রতিবারই জাহাজের চিকিৎসকরা আলিফার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ও তাঁর পূর্বসূরিরা চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে প্রতিবারই আলিফা এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলিফা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীন ভ্রমণের সুযোগ পায় এবং সেই সফরে সে তার মায়ের অপারেশন করা চিকিৎসক শেং রুইফাংয়ের সঙ্গে দেখা করেছিল। বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) তার পড়াশোনার খরচ বহন করছে।
মন্তব্য করুন