ভারতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি হতাহতের শঙ্কা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৩ | ২০:২৩ | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ | ০৬:২৭
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য উড়িষ্যার বালাশোরে তিনটি ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি যাত্রীবাহী ট্রেন আরেকটি ট্রেনের লাইনচ্যুত বগিকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একটি মালবাহী ট্রেনও সেখানে দুর্ঘটনায় পড়ে। হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশিও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর এনডিটিভির।
দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করে দেশটির রেল কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিস। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বগিগুলোতে অনেকে আটকা পড়েন। দুর্ঘটনার ব্যাহত হচ্ছে ট্রেন চলাচল। বাতিল করা হয়েছে অন্তত ৫টি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা। নিহতদের প্রতি পরিবারকে ১০ লাখ রুপি এবং আহতদের ২ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়।
রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানিয়েছেন, হাওড়া থেকে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসের অন্তত ১৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের ট্র্যাকে পড়ে যায়। সে সময় অন্য দিক থেকে আসা যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট ট্রেনটি লাইনচ্যুত বগিগুলোকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একটি মালবাহী ট্রেনও সেখানে দুর্ঘটনায় পড়ে।
অন্য একটি সূত্র বলছে, প্রথমে হাওড়া-ব্যাঙ্গালুরু এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। সেসব বগিতে ধাক্কা দিয়ে মালবাহী ট্রেনের ওপর ছিটকে পড়ে করমন্ডল এক্সপ্রেস।
বালাশোর এবং আশপাশের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে জরুরি সেবা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্ধশতাধিক অ্যাম্বুলেন্স হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করছে। জাতীয় বিপর্যয় ত্রাণ বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং রাজ্যের কর্মীরা আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধারে কাজ করছেন। উড়িষ্যা ফায়ার সার্ভিসের প্রধান সুধাংশু সারঙ্গি উদ্ধার তদারকি করছেন।
কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের পক্ষ থেকে শুক্রবার বলা হয়, চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসে সাধারণত বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করে থাকেন। ফলে রেল কর্তৃপক্ষ এবং উড়িষ্যা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে হাইকমিশন।
এ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি রেলমন্ত্রীকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও টুইটে জানান মোদি।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে জানান, তিনি মুখ্য সচিব এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক রাজস্ব মন্ত্রী প্রমিলা মালিককে দুর্ঘটনাস্থলে যেতে বলেছেন।
উড়িষ্যার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জানান, করমন্ডল এক্সপ্রেস, একটি লোকাল ট্রেন এবং একটি মালবাহী ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কিছু বগি লাইনচ্যুত এবং অনেকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শুক্রবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে করমন্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালাশোরে। সেখানকার বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে ২৩ বগির ট্রেনটি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, করমন্ডল এক্সপ্রেস ধাক্কা দেয় একটি মালবাহী ট্রেনে। ফলে করমন্ডল এক্সপ্রেসের প্রথম তিনটি বগি বাদে সবক’টি বগিই লাইন থেকে ছিটকে পড়ে। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, করমন্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির ওপর উঠে যায়।
সিগন্যালে ত্রুটি নাকি চালকের ভুলে এই দুর্ঘটনা– তা তদন্ত করা হচ্ছে।