ভারতের উড়িষ্যায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত ২৮০ জন ও আহত ৯ শতাধিক। এই দুর্ঘটনায় শনিবার এক দিনের শোক ঘোষণা করেছেন উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক।

শনিবার সকালে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় এএনআই। 

রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বালেশ্বর স্টেশন থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বাহানাগা স্টেশনের কাছে ঘটা এই দুর্ঘটনায় হাওড়া থেকে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসের অন্তত ১৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের ট্র্যাকে পড়ে যায়। সে সময় অন্য দিক থেকে আসা যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট ট্রেনটি লাইনচ্যুত বগিগুলোকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একটি মালবাহী ট্রেনও সেখানে দুর্ঘটনায় পড়ে।

দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে নেমেছেন ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্সের (এনডিআরএফ) সদস্যরা। রয়েছে উড়িষ্যা ডিজাস্টার র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও (ওডিআরএএফ)।

এদিকে ভারতের কেন্দ্রীর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব টুইট করে জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন।

দুর্ঘটনার খবরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি টুইট করে বলেছেন, ‘উড়িষ্যায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই দুঃসময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহত ব্যক্তিরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। পরিস্থিতি নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গেও কথা বলেছি।’

ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করে দেশটির রেল কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিস। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বগিগুলোতে অনেকে আটকা পড়েন। দুর্ঘটনার ব্যাহত হচ্ছে ট্রেন চলাচল। বাতিল করা হয়েছে অন্তত ৫টি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা। নিহতদের প্রতি পরিবারকে ১০ লাখ রুপি এবং আহতদের দুই লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়।

অর্ধশতাধিক অ্যাম্বুলেন্স হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করছে। জাতীয় বিপর্যয় ত্রাণ বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং রাজ্যের কর্মীরা আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধারে কাজ করছেন। উড়িষ্যা ফায়ার সার্ভিসের প্রধান সুধাংশু সারঙ্গি উদ্ধার তদারকি করছেন। বালাশোর এবং আশপাশের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে জরুরি সেবা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের পক্ষ থেকে শুক্রবার বলা হয়, চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসে সাধারণত বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করে থাকেন। ফলে রেল কর্তৃপক্ষ এবং উড়িষ্যা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে হাইকমিশন। দুর্ঘটনাবিষয়ক তথ্য জানতে বাংলাদেশিদের জন্য একটি হটলাইন (+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩ হোয়াটসঅ্যাপ) নম্বর দিয়েছে উপহাইকমিশন।

এ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি রেলমন্ত্রীকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও টুইটে জানান মোদি।

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে জানান, তিনি মুখ্য সচিব এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক রাজস্ব মন্ত্রী প্রমিলা মালিককে দুর্ঘটনাস্থলে যেতে বলেছেন।

/এসএইচ/