কয়লা পাচার, গরু পাচার, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পর এবার পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তৎপর হলো ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। বুধবার সকাল থেকে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় একসঙ্গে প্রায় ২০টি জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। নজিরবিহীনভাবে রাজ্যের ১৮টি পৌরসভা ও নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত দুজনের বাড়ি, অফিসে একযোগে তল্লাশি অভিযান চলে।

বুধবার কলকাতার নিজাম প্যালেসের সিবিআই দপ্তর থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে ১০০ জন সিবিআই অফিসারের ১৬টি দল প্রচুর সংখ্যক সিআরপিএফ জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি অভিযান চালানোর জন্য বের হয়।

সকাল ১১টা নাগাদ সল্টলেকের বিকাশ ভবনে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরে ঢোকেন সিবিআই কর্মকর্তারা। এ দপ্তরেই বসেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের পাশাপশি সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ হুগলি জেলার চুঁচুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দক্ষিণ দমদম, নিউ ব্যারাকপুর, দমদম, পানিহাটি, কামারহাটি, টাকি, হালিশহর, বরাহনগর, টিটাগড়, নদীয়া জেলার শান্তিপুরসহ ১৮টি পুরসভায় হানা দেয় সিবিআই। দুর্নীতিতে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অয়ন শীলের চুঁচুড়ায় জগুদাস লেনের ফ্ল্যাটে ও বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসেও হানা দেয় পাঁচ সদস্যের সিবিআই প্রতিনিধি দল। সবজায়গায় দীর্ঘ ম্যারাথন তল্লাশি চালান সিবিআই কর্মকর্তারা।

সিবিআই সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। মজদুর, ক্লার্ক, ঝাড়ুদার, ড্রাইভার থেকে শুরু করে সব পদেই নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে।

সিবিআইয়ের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত নথি উদ্ধারের কারণেই মূলত এই পুরসভাগুলোতে তল্লাশি অভিযান। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক পুরসভায় নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ড অব কাউন্সিলরদের মিটিংয়ে প্রস্তাব পেশ করে তা পাস করা হয়। পাস হওয়া রেজিলিউশনে কোন কোন কাউন্সিলরের সই রয়েছে, সেই তথ্যও সংগ্রহ করবে সিবিআই। প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে পুরসভাগুলোর কর্মকর্তাদের।

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের পুরসভাগুলোতে বিগত ৯ থেকে ১০ বছর ধরেই ব্যাপক নিয়োগ দুর্নীতি রয়েছে, এমন অভিযোগের তদন্ত নেমে গত ১৯ মার্চ তৃণমূল নেতা অয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি দাবি করে, অয়নের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের উত্তরপত্র পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এই তৃণমূল নেতা ‘এবিএস ইনফ্রোজোন’ নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে একাধিক পুরসভায় চাকরি দিয়েছে। এরপরই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজ্যের পুরসভাগুলোতে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর বুধবার একাধিক পুরসভা ও নগোরন্নয়ন দপ্তরে তল্লাশি চালাল সিবিআই।

সিবিআইয়ের দাবি, শুধু অয়নের মাধ্যমেই ২০টির বেশি পুরসভার নিয়োগে সরাসরি দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। এছাড়া সব মিলিয়ে নজরে রাজ্যের ৬০টির বেশি পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি ঘটেছে।

এদিকে সিবিআইয়ের এমন ম্যারাথন তল্লাশি নিয়ে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে এর পেছনে যে রাজনীতি রয়েছে সেটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখছিলাম। এখনও পর্যন্ত কোনো অনিয়ম পাইনি। কেন এই তল্লাশি তা নিয়ে আগে থেকে কিছু বলা ঠিক হবে না। তবুও আবারও বলছি পুরোটাই রাজনীতি হচ্ছে।’