সিলেটে গত বুধবারের সড়ক দুর্ঘটনায়  নিহত হন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের মুরাদপুর গ্রামের দুলাল মিয়া। তাঁর বাড়িতে চলছে মাতম। গত বছর অপর এক দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর বাবা ও এক ভাই।

পরিবারের তিন ভাইয়ের মধ্যে বেঁচে আছেন শুধু আব্বাস মিয়া (২২)। তার বিধবা মায়ের মুখে এখন আর কথা ফোটে না। একে একে স্বামী ও দুই কলিজার ধন হারিয়ে তিনি এখন বাকরুদ্ধ।

জামালগঞ্জ উপজেলার সুরমা নদীর দুর্লভপুর এলাকায় বালুবোঝাই দুই নৌকার সংঘর্ষে নৌকাডুবিতে শারমিন বেগমের (২৫) প্রথম স্বামী হেলাল মিয়া, বাবা তুলা মিয়া ও খালাতো ভাই এলামুন ওরফে এনামুল মিয়া গত বছর নিহত হয়েছেন। সেদিন থেকেই যেন দুঃখ আঁকড়ে ধরেছিল দুই সন্তানের জননী শারমিনকে। যখন স্বামী, বাবা ও ভাই নিহত হন, ছোট মেয়ে লামিয়া তখন সাত মাসের গর্ভে। স্বামীকে হারিয়ে সন্তানসম্ভবা শারমিন যখন দিশেহারা, তখন আত্মীয়স্বজন সাহস দিয়েছিলেন, স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন নতুন জীবনের। লামিয়ার জন্মের পর প্রায় আড়াই মাস আগে নিজের দেবর দুলাল মিয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় শারমিনের।

নতুন করে জীবনের স্বপ্ন বোনেন তিনি। কিন্তু বিধিবাম। দুলালের সঙ্গেও বেশি দিন সংসার করতে পারলেন না। বুধবার ভোরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকায় পিকআপ ও ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত হন দুলালও। এসব ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। এদিকে স্বামী ও এক ছেলের পর আরেক ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে আছেন শারমিনের শাশুড়ি আয়েশা বেগম।

শারমিন বেগম জানান, একটি ব্যাংকে ৯০০ টাকা করে সপ্তাহে দুটি কিস্তি দিতে হয়। সেই কিস্তির টাকা জোগাড় করতেই কাজে গিয়েছিলেন দুলাল। বুধবার একটি ঢালাইয়ের কাজে পিকআপে করে তাঁরা বেশ কয়েকজন যাচ্ছিলেন। কাজ করে এ সপ্তাহের কিস্তি পরিশোধ করার কথা ছিল তাঁর।

শারমিন বললেন, এই দুর্ঘটনায় তাঁদের সব শেষ হয়ে গেল। তাঁদের আর চলার কোনো উপায় রইল না। এখন তাঁরা কী করবেন, কোথায় যাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।

প্রতিবেশী আবুল কালাম, আবদুল মালেকসহ কয়েকজন বললেন, মেয়েটা (শারমিন) দুই শিশুসন্তান নিয়ে একেবারে অসহায় হয়ে গেলেন। তাঁরা সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের আহ্বান জানান শারমিনদের পাশে দাঁড়াতে। গ্রামের পক্ষ থেকে তাঁরাও যতটুকু পারেন সহযোগিতা করবেন।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বললেন, পরিষদের আগামী বৈঠকে তাঁদের অনুদান দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি।

এ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আরও একজন। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ তে। বৃহস্পতিবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান বাদশা মিয়া (২২)। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মায়েদ নুরের ছেলে।