- আন্তর্জাতিক
- হাঁপানি অবহেলা নয়
হাঁপানি অবহেলা নয়

হাঁপানি হল শ্বাসনালির সংকোচনজনিত একটি রোগ। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা ও ধোঁয়া যখন নাকের ভেতর দিয়ে শ্বাসনালিতে ঢোকে, তখন শ্বাসনালিতে প্রদাহ হয়। এই অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের ফলে শ্বাসনালি সাময়িকভাবে সংকুচিত হয়ে যায়। আবার যখন অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া চলে যায়, তখন শ্বাসনালি আগের পর্যায়ে ফিরে আসে। তবে সবার ক্ষেত্রে কিন্তু অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয় না। তাই পারিপার্শ্বিক ধুলা-ধোঁয়ার প্রভাবে সবারই যে হাঁপানি হবে, এমনটা নয় মোটেও।
হাঁপানির আশঙ্কা বাড়ে মূলত দুটি কারণে– জিনগত গঠন ও পরিবারে হাঁপানির ইতিহাস থাকলে। ফার্স্ট ব্লাড রিলেশনের (মা-বাবা, দাদা-দাদি প্রমুখ) কারও এই রোগ থাকলে আপনারও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ ছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কাজের সূত্রে যাঁদের ধুলা-ধোঁয়ার মধ্যেই বেশিরভাগ সময়টা কাটাতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে হাঁপানির ঝুঁকি বেশি। হিট চেম্বার, কাঠকয়লার ধোঁয়া ইত্যাদি থেকে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে। তবে অ্যালার্জি আদৌ হাঁপানি কিনা, তা জানতে নানা পরীক্ষা করা হয়। প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে শুকনো কাশি (একবার কফযুক্ত কাশিও হতে পারে), শ্বাসনালির মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ, শ্বাসকষ্ট। সোজা রাস্তায় চলতে গেলে, সিঁড়িতে উঠতে গেলে, ভারী জিনিস নিলে যদি শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে হয়তো আপনি হাঁপানিতে আক্রান্ত।
আবার সিজন চেঞ্জের সময় এ ধরনের কাশি ও শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বাড়ে। এই লক্ষণগুলোর ওপর ভিত্তি করে ক্লিনিক্যাল ডায়াগনসিস করা হয়। যদি দু’সপ্তাহের বেশি কাশি হয়, তাহলে একবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে হাঁপানি বা টিউবারকুলোসিসের সম্ভাবনা থাকে। যদি রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাঁর হাঁপানির অন্যান্য লক্ষণ আছে, তাহলে পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। আবার যদি কেউ চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছরেই হাঁপিয়ে যান, তাহলে সতর্ক হওয়া দরকার। অনেকে আবার বয়স একটু বাড়লে, হাঁপিয়ে যাওয়াটাকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে দেখেন। অবহেলা করবেন না। লক্ষণ দেখা গেলে অবিলম্বে সতর্ক হোন। হাঁপানির সঙ্গে সঙ্গে নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, গলা চুলকানো, র্যাশ বেরোনো ইত্যাদি হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন। ডায়াগনসিসের পরে বোঝা যায় রোগীর কী ধরনের হাঁপানি হয়েছে– মাইল্ড, মডারেট না অ্যাকিউট। চিকিৎসা শুরু হয় এর ভিত্তিতে। স্থিতিশীল বা স্টেবল হাঁপানি ও অ্যাকিউট হাঁপানি- এই দু’ধরনের অসুখে আলাদা আলাদাভাবে চিকিৎসা করা হয়। অ্যাকিউট অ্যাজমার ক্ষেত্রে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করতে হয়। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়।
প্রায় সব সময়ই নেবুলাইজার ও মাঝেমধ্যে স্টেরয়েডের প্রয়োজন হয়। যাঁরা এসিতে থাকেন, তাঁরা তাপমাত্রা ২৪-২৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। বারবার এসি ঘর থেকে ঢোকা-বেরোনো উচিত নয়। হাউস ডাস্ট, বাড়িতে আরশোলা, আশপাশে আগাছা ইত্যাদি থাকা চলবে না। হাঁপানি সাধারণত ১৮ বছরের পর (বয়স যদিও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়) আর পুরোপুরি সেরে যায় না। ছোটবেলায় হাঁপানি হলে যদি সঠিক চিকিৎসা হয় ও নিয়ম করে ওষুধ খাওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তা অনেক ক্ষেত্রেই সেরে যায় ও রোগী দীর্ঘদিন ওষুধ ছাড়াই ভালো থাকেন। বড় বয়সে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, কিন্তু পুরোপুরি সারে না। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময় ওষুধ অনেকটা কমিয়ে দেওয়া হয়। ইনহেলার ছাড়াও অ্যান্টি অ্যালার্জিক ট্যাবলেট, নেজাল স্প্রে ইত্যাদিও দিতে হতে পারে। মনে রাখবেন, ইনহেলার থেরাপি নিয়মিত হওয়া দরকার। অনেকেই আর পাঁচটা ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে যতটা সতর্ক হয়ে ওষুধ নেন, হাঁপানির ক্ষেত্রে একটু ভালো হয়ে গেলে ওষুধ বন্ধ করে দেন। এটা উচিত নয়।
মন্তব্য করুন