আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞায় হোয়াইট হাউসের অস্বীকৃতি

হোয়াইট হাউস। ফাইল ছবি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪ | ২০:৫৬
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বাইডেন প্রশাসন বলেছে, কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের তোলা এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের তারা বিরোধিতা করেছে। গাজায় আগ্রাসনের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়ে সম্প্রতি আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি আদালতটির বিচারিক প্যানেলের কাছে আবেদন করেন। এর জেরে কয়েকজন মার্কিন আইনপ্রণেতা সংস্থাটির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ওপর জোর দেন।
এক্সিয়স অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে হোয়াইট হাউস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দফায় দফায় প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আলোচনা করে। রিপাবলিকানরা আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খানসহ অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দাবি করছেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন সিনেটের এক শুনানিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানান, বাইডেন প্রশাসন আইসিসি কৌঁসুলির বিরুদ্ধে দ্বিদলীয় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তবে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস মুখপাত্র জন কিরবি এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কোনো সঠিক জবাব নয়।
কিরবির বক্তব্যের পর একই সুরে কথা বলেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কেরাইন জিন প্যারি। তিনি বলেন, আইসিসির বিরুদ্ধে যে প্রস্তাবটি আনা হয়েছে, বাইডেন প্রশাসন তা সমর্থন করছে না। আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা মার্কিন উদ্বেগ প্রকাশের কোনো যথাযথ ও কার্যকর পদ্ধতি নয়।
এ অবস্থায় গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিনিয়ত ঘটছে হতাহতে ঘটনা। গাজায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করায় নিয়মিত ক্ষুধায় মৃত্যুও ঘটছে। গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এখন নেই বললেই চলে।
গাজা এখন ‘দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকা’
আলজাজিরা জানায়, ফিলিস্তিনের একটি এনজিওর পরিচালক মুহাম্মদ আইদার বক্তব্যে গাজায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের অষ্টম মাসে গাজা উপত্যকা এখন দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকা। সেখানে মানুষ অভুক্ত থাকছেন; চিকিৎসা উপকরণের ঘাটতি, শিশুদের অপুষ্টি, পানিশূন্যতা, অসুখ-বিসুখ লেগেই আছে। তিনি বলেন, অনেক মৃতদেহ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। ইসরায়েলের উদ্দেশ্য লোকজনকে অভুক্ত রেখে গাজা উপত্যকা থেকে বের করে দেওয়া।
রাফায় হামলা হয়েছে ‘মার্কিন অস্ত্রে’
সিএনএনের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গাজার রাফায় যে বিস্ফোরক দিয়ে গত রোববার শরণার্থীদের তাঁবুতে ইসরায়েল ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। ওই হামলায় মুহূর্তেই অনেকগুলো তাঁবুতে আগুন লেগে যায়। পুড়ে মারা যান নারী-শিশুসহ ৪৫ জন। দগ্ধ ও আহত হন ২০০ জনের বেশি। মার্কিন গণমাধ্যমটির হাতে যাওয়া ফুটেজে দেখা গেছে, হামলার পর শত শত ফিলিস্তিনি উদ্ভান্তের মতো ছোটাছুটি করছেন। ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর অন্তত ১৩ লাখ ফিলিস্তিনি রাফা ছেড়েছেন। গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চল থেকে এসে তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখনও বহু মানুষ রাফায় অবস্থান করছেন।
মধ্য গাজার ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ঐতিহাসিক অনেক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে মধ্য গাজার গ্রেট ওমারি মসজিদ অন্যতম। বৈচিত্র্যময় নকশায় গড়ে তোলা মসজিদটিকে ওই এলাকার অন্যতম পুরোনো স্থাপনা বলে ধরে নেওয়া হতো। গত ডিসেম্বরে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়। এতে এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, তারা কেবল একটি ঐতিহাসিক স্থাপনাই হারাননি, নামাজ আদায়ের একটি স্থাপনাও হারিয়েছেন। এ মসজিদে ছিল সুউচ্চ মিনার। এ কারণে নানা ঘোষণাও এখান থেকে দেওয়া হতো।
- বিষয় :
- গাজা
- ইসরায়েল
- ফিলিস্তিন
- আইসিসি
- হোয়াইট হাউজ