লোকসভা নির্বাচন
বুথফেরত জরিপ ভুল প্রমাণিত করল বিরোধীরা

ছবি: বিবিসি
শুভজিৎ পুততুন্ড, কলকাতা
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪ | ২২:৫৯ | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ | ২৩:০০
নির্বাচন শেষে বুথফেরত জরিপে পাত্তা পায়নি ইন্ডিয়া জোট। প্রায় প্রত্যেক জরিপ সংস্থাই ৩৫০-এর বেশি আসনে এগিয়ে রেখেছিল এনডিএ শিবিরকে। যদিও আজ মঙ্গলবার সকালে ইভিএম খুলতেই কঠিন লড়াইয়ের আভাস দেয় বিরোধীরা।
টানা তৃতীয়বারের জন্য ভারতের কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) ক্ষমতায় আসলেও কঠিন লড়াই দিয়েছে বিরোধী দলের জোট ইন্ডিয়া।
গোটা দেশজুড়েই মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় লোকসভা নির্বাচনের গণনা। কিন্তু গণনা শুরুর পর শাসক জোট এনডিএকে জোর টক্কর দিল ইন্ডিয়া জোট। উত্তরপ্রদেশের যে বারানসি কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জিতেছেন, সেখানেও গতবারের চেয়ে জয়ের ব্যবধান অনেক কম। কংগ্রেস প্রার্থী অজয় রাইকে মাত্র দেড় লাখ ভোটে হারিয়েছেন মোদি।
মহারাষ্ট্রেও একই অবস্থা। এনসিপি (শারদ পাওয়ার গোষ্ঠী) ও শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) সঙ্গ ত্যাগ করে শিবসেনার (একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী) সঙ্গে জোট করে লড়াই করেছিল। কিন্তু সেখানেও উদ্যোগ ঠাকরে ও শারদ পাওয়ারের দল প্রতিপক্ষের থেকে ভালো ফল করেছে।
রাজস্থান, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, বিহারের মতো ভারতের হিন্দি বলের রাজ্যগুলিতে খুব ভালো ফল করেছে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থীরা।
ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসভার আসন রয়েছে উত্তরপ্রদেশে (৮০ টি)। দেশটির রাজনীতিতে কথিত আছে, উত্তরপ্রদেশ যার হাতে থাকবে, ভারতের কেন্দ্রের ক্ষমতাও তার হাতে। সেক্ষেত্রে এই রাজ্যেও দাগ কাটতে পারেনি গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা।
তুলনামূলকভাবে ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক দল সমাজবাদী পার্টি ভালো ফল করেছে। ৮০টি লোকসভার আসনের মধ্যে বিজেপি ৩৪ আসনে এগিয়ে রয়েছে। ইন্ডিয়া রয়েছে ৪২ আসনে। বিরোধীদের ঝড়ে বিজেপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা মন্ত্রীকে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে। আমেথি কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী কে এল শর্মার কাছে ১ লাখ ৬০ হাজার ভোটে হারতে হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে।
শেষবার ২০১৯ সালে নির্বাচনে এই উত্তর প্রদেশ থেকে ৬২ আসনে জয় পেয়েছিল এনডিএ। বহুজন সমাজ পার্টির ১০ এবং সমাজবাদী পার্টি ৫ আসনে জয় পায়।
সব মিলিয়ে বিরোধীদের দলের জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) আসনসংখ্যা রয়েছে ২৩২ আসনের কাছাকাছি। এর মধ্যে প্রায় ১০০ আসন ছুঁই ছুঁই কংগ্রেসের। গত দুটি লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার যথেষ্ট ভালো ফল করতে চলেছে শতাব্দীপ্রাচীন এই দলটি।
শেষ বার ২০১৯ সালে ৫২ আসনে জয় পায় তারা। তার আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের দখলে ছিল মাত্র ৪৪টি আসন। ‘
ইসবার ৪০০ পার’ (এবার ৪০০ পার)- এমন স্লোগান দিয়েই ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে প্রচারণা শুরু করা নরেন্দ্র মোদি অবশ্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পরেও দলীয় কর্মীদের ভোকাল টনিক দিয়েছেন। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে এনডিএর উপর ভরসা রাখার জন্য তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তৃতীয়বারের জন্য এনডিএ জোটকে ক্ষমতায় আনায় ইতিহাস তৈরি হল বলেও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কঠোর পরিশ্রমের জন্য বিজেপির কর্মী সমর্থকদেরও অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ইন্ডিয়া জোটের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের পর কংগ্রেস নেতা দেশের ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী। এদিন দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল জানিয়েছেন, ‘কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোট এবারের ভোটে শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে লড়েনি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি ইডি, সিবিআইর অপব্যবহারের বিরুদ্ধেও লড়েছে।’
হাতে সংবিধান নিয়ে রাহুল বললেন, ‘এই লড়াই ছিল সংবিধানের বাঁচানোর লড়াই। দেশবাসীকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা সংবিধানকে রক্ষার প্রথম ও সবথেকে বড় পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছেন। যখন দল ভেঙেছে, আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে, মুখ্যমন্ত্রীদের জেলে ঢুকিয়েছে, তখনই জানতাম যে মানুষ এর জবাব দেবে।।’
ভোটের ফল প্রকাশের পর এদিন বিকেলে কংগ্রেসের সদর দপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেস সাংসদ সোনিয়া গান্ধী, দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশসহ অন্যরা।
রাহুল জানিয়ে দেন, ‘এখন একটি বিষয়ে স্পষ্ট যে, এই রায় মোদিজির বিরুদ্ধে গিয়েছে। এটা তার রাজনৈতিক হার, নৈতিক হার। যে ব্যক্তি সব জায়গায় নিজের নামে ভোট চাইতেন, এটা তার কাছে খুব বড় হার।’
তবে এখনো পর্যন্ত লোকসভা ভোটের গণনার যা ট্রেন্ড, তাকে তাতে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। যদিও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে আছে। তবে এই অবস্থায় শাসক জোটকে স্বস্তিতে থাকতে দিতে নারাজ বিরোধী দলের জোট ইন্ডিয়া।
আজ
মঙ্গলবার দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তর থেকে সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল গান্ধী সেটাই জানিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, ‘এই নির্বাচনের সব থেকে বড় বিষয় হল দেশবাসী একজোট হয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তারা মোদি জুটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’ শুধু তাই নয়, রাহুল এও জানালেন, ‘কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য তাদের পুরনো শরিক দল জনতা দল ইউনাইটেড, তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করবেন কিনা- এই বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল বুধবার ইন্ডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছে।
- বিষয় :
- লোকসভা নির্বাচন