মমতার পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয়ে যাবে ছাত্র সমাজ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি-সংগৃহীত
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪ | ১৫:৪৭
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার সচিবালয় মুখী অভিযান করবে অরাজনৈতিক ছাত্রগোষ্ঠী ছাত্র সমাজ। আরজিকর কাণ্ডের দোষীদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এবং রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এই অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে।
অভিযান ঘিরে একদিকে যেমন রাজনৈতিক মহলে রয়েছে টানটান উত্তেজনা অন্যদিকে নবান্ন অভিযানে সতর্ক রাজ্য প্রশাসন। পুলিশের শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন, মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের নামে শহরজুড়ে তাণ্ডব চলতে পারে। এমন আশঙ্কায় রাজ্যের সচিবালয় ও লাগোয়া এলাকাকে সেদিন কার্যত দুর্গে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য পুলিশ। লক্ষ্য একটাই, জমায়েত ঘিরে যেন কোনো ভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়। মোতায়েন থাকবে দুই হাজারের বেশি পুলিশকর্মী। সঙ্গে আইজি, ডিআইজির মতো পুলিশের শীর্ষ পদাধিকারীরা।
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায় সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির আগের দিনই করা নিরাপত্তা বলয়ে কার্যত মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রাজ্যে প্রশাসনিক প্রধান কার্যালয় নবান্নকে। আগামীকাল মূলত যে তিনটে পথ দিয়ে নবান্নের দিকে আন্দোলনকারীরা আসবেন, তাদের আটকাতে হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে নবান্ন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কোনা এক্সপ্রেস ওয়ের সাতরাগাছি ব্রিজের আগে ও হাওড়া ময়দানে জি টি রোডের ওপর লোহার বিম ঝালাই করে ব্যারিকেট নির্মাণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাস্তার দুই ধারে ঘিরে দেয়া হচ্ছে টিন দিয়ে। নজরদারি রাখার জন্য লাগানো হচ্ছে গোটা এলাকায় অতিরিক্ত সিসিটিভি।
এ ছাড়া আগামীকাল আন্দোলনকারীদের থামাতে ও অশান্তি এড়াতে তিনটি জায়গাতেই থাকছে ডিসি মর্যাদার একাধিক পুলিশ আধিকারিক, নবান্ন ও লাগোয়া এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন ২১ জন আইজি এবং ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসার, ১৩ জন এসপি বা ডিসি পদমর্যাদার অফিসার, ১৫ জন এডিসিপি বা এসিপি পদমর্যাদার অফিসার, ২২ জন এসি বা ডেপুটি এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা, এমনকি ২৬ ইন্সপেক্টরও। থাকবে কম্ব্যাক্ট ফোর্স, র্যাফ, জলকামানসহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। সব মিলিয়ে আগামীকাল নবান্ন অভিযানকে ঘিরে চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্মকর্তারা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কলকাতা পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা এদিন সচিবালয় অভিযানকে বেআইনি বলে মন্তব্য করেন। সাধারণত নবান্ন চত্বরে কোনো রকম জমায়েত বা অভিযানের জন্য অনুমতি প্রয়োজন হয়। তবে ২৭ তারিখের সেই অভিযানের জন্য কেউ পুলিশের কাছে কোনো অনুমতিই চায়নি বলে জানান এডিজি মনোজ ভার্মা।
নবান্ন অভিযান উপলক্ষে সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ। সেখানে বলা হয়, যেহেতু অনুমতি নেওয়া হয়নি, তাই এই কর্মসূচি আইনত বৈধ নয়। কারণ নবান্ন সংরক্ষিত জায়গা। এখানে যেকোনো কর্মসূচি করার জন্য অনুমতি নিতে হয়, কেউ অনুমতি নেয়নি। ফলে এটা বেআইনি। তারা অন্য কোথাও জমায়েত করলে আমরা সাহায্য করব। তবে নবান্নে নয়।
ওই বৈঠকে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানান, পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের নাম করে ডাক দেওয়া হয়েছে এই অভিযানের। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ নামে কোনো সংগঠনই নেই।
তিনি আরও বলেন, কিছু লোক গণ্ডগোল করে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। কালকের ভিড়ের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতিকারী মিশে গিয়ে ঝামেলা বাঁধানোর চেষ্টা করবে। সাধারণ মানুষের ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ এসব করার চেষ্টা করবে।
এদিকে নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে যখন রাজনীতির পারদ চড়ছে। এর মাঝেই এই অভিযানের পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করল তৃণমূল নেতৃত্ব। এই অভিযানের মাঝে গুলি চালানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, জয়প্রকাশ মজুমদাররা। এই মিছিলের পেছনে বিজেপির ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। সোমবার একটি সাংবাদিক বৈঠক করে দুটি গোপন ভিডিও প্রকাশ করা হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে।
- বিষয় :
- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
- সচিবালয়
- অভিযান
- কলকাতা