ঢাকা শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ব্যাপক বিক্ষোভে কাঁপছে নেতানিয়াহুর মসনদ 

ব্যাপক বিক্ষোভে কাঁপছে নেতানিয়াহুর মসনদ 

বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘ফ্যাসিস্ট’ এবং ‘হাত রক্তে রঞ্জিত’ বলে সম্বোধন করেন। ছবি: সংগৃহীত

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:২১

গাজা উপত্যকা থেকে ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের পর ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে দেশটির শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন হিস্ট্রাড্রট। রোববার তারা ইসরায়েলজুড়ে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ইসরায়েলের তেল আবিব ছাড়াও অন্য শহরগুলোতে এ বিক্ষোভ চলছে। ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘ফ্যাসিস্ট’ এবং ‘হাত রক্তে রঞ্জিত’ বলে সম্বোধন করেন। তারা বলছেন, নেতানিয়াহু শুধু নিজের গদির কথা ভাবছেন, ইসরায়েলের জনগণের কথা নয়।

এ প্রেক্ষাপটে সংকটে পড়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। তাদের পদত্যাগের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। সিএনএন জানায়, সোমবার বিক্ষোভে যোগ দেন ইসরায়েলের প্রধান বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ। বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, হাজার হাজার ইসরায়েলি রাস্তায় নেমে এসেছে, যাতে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের আটক ও দমনপীড়ন চালাতে দেখা গেছে।

এএফপি জানায়, রোববার শুরু হওয়া বিক্ষোভ তেল আবিব ছাড়াও বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের কণ্ঠে নেতানিয়াহুবিরোধী নানা স্লোগান শোনা গেছে। তারা জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তখন তারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এর মধ্যে গত শনিবার ছয়জনের মরদেহ দক্ষিণ গাজার রাফা এলাকায় একটি সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করে ইসরায়েলের সেনারা। বলা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতির শর্তে এ জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, গাজায় হামাসের হাতে এখনও ৯৭ জন জিম্মি। যুদ্ধ চলাকালে নানাভাবে মারা গেছেন ৩৩ জন।

গত বছরের নভেম্বরে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মধ্যে বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। জিম্মিদের স্বজনরা মনে করেন, এখনও যারা জিম্মি, ইসরায়েল সরকার তাদের মুক্তির জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জিম্মি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের ফোরাম বলছে, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তির প্রয়োজন ছিল। তারা বলেন, কয়েক মাসের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টায় বিলম্ব, আর অজুহাত না দেখালে ওই ছয় জিম্মি হয়তো এখনও বেঁচে থাকতেন।

একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে জিম্মিদের পরিবার ইসরায়েলজুড়ে সাধারণ বিক্ষোভের ডাক দেয়। এর পরপরই ইসরায়েলের শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন হিস্ট্রাড্রট এতে সমর্থন জানায়। হিস্ট্রাড্রটের চেয়ার আর্নন ভার-ডেভিড এক বিবৃতিতে বলেন, শুধু তাদের হস্তক্ষেপই সরকারকে নাড়া দিতে পারে। জিম্মি মুক্তিতে রাজনৈতিক কারণে একটি চুক্তির অগ্রগতি হচ্ছে না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগার বলেছেন, প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর অল্প সময় আগে হামাসের সদস্যরা ছয় জিম্মিকে হত্যা করেছে। তবে কাতারে অবস্থানরত হামাসের কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশক বলেন, জায়নবাদীদের বোমার আঘাতে জিম্মিরা নিহত হয়েছেন।

হামাসের হাতে জিম্মি ৮০ বছরের গাড়ি মোসে মোজেসের নাতনি ইফরাত ম্যাচিকাওয়া একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে না পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েলের সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন। সেই সঙ্গে তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিতে ইসরায়েলের নাগরিকদের প্রতি জোর আহ্বান জানান। 

গাজায় এক দিনে আরও ৪৮ জন নিহত
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ৭৮৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৪ হাজার ২২৪ জন। সোমবার এক দিনে আরও ৪৮ জন নিহত হন। হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×