গাজায় আগ্রাসন
ইসরায়েলে বিভাজন বাড়লেও নেতানিয়াহু অনড়
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৯:১৫
ইসরায়েলের অনেক বাসিন্দা যেখানে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তনের কথা অস্বীকার করে আসছেন। গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর ইসরায়েলে শুরু হওয়া সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের মধ্যে গত সোমবার ট্রেড ইউনিয়ন ধর্মঘটের ডাক দেয়।
তাদের দাবি ছিল, নেতানিয়াহু প্রশাসন যেন দ্রুততর সময়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। কিন্তু আদালতের আদেশে ৮ লাখ ইসরায়েলির অংশগ্রহণে গঠিত ওই ইউনিয়নের ধর্মঘট কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, দিনটি শেষ হয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে, যেখানে তিনি হামাসের সঙ্গে আলোচনায় ছাড় দিতে অস্বীকৃতি জানান। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদেরও পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ বিক্ষোভ চলাকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। কিন্তু এক আবেগতাড়িত মুহূর্ত রাজনৈতিক বাঁক পরিবর্তনের উৎস হিসেবে কাজ করেনি। তেল আবিব থেকে প্রকাশিত ডানপন্থি পত্রিকা ইসরায়েল হেওমের লেখক এরিয়েল কাহানা বলেন, রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। মনে হচ্ছে, ইসরায়েলে কোনো বিরোধী দল অবশিষ্ট নেই।
যখন এ বিক্ষোভ-ধর্মঘট কিছুটা স্তিমিত হলো, তখন নজরে পড়ল কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন নগর প্রশাসন, পরিবহন ব্যবস্থা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন খাত ক্ষতির মুখে পড়েছে। ২০২৩ সালের মার্চের সাধারণ ধর্মঘট ও গণবিক্ষোভের চেয়ে এবারের বিক্ষোভ আলাদা। ওই বিক্ষোভের জেরে নেতানিয়াহু বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। এবার তাঁর ডানপন্থি জোট জনসম্পৃক্ততা বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। কেবল প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ছিলেন ব্যতিক্রম। সম্প্রতি তিনি ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার শর্ত কঠিন করতে মন্ত্রিসভার এক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভোট দেন।
সোমবার রাতে নেতানিয়াহু তাঁর বক্তব্যে ঐক্যের ডাক দিয়ে বলেন, শত্রুরা আমাদের ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে কিছুই বলেননি। অবশ্য জিম্মি মৃত্যু ঠেকাতে না পারায় জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা চান, সরকার যাতে ছাড় দিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছায় এবং জিম্মিরা মুক্ত হয়ে ফিরে আসে। কিন্তু নেতানিয়াহু সরকার চাচ্ছে সাময়িক যুদ্ধবিরতি এবং পরে লড়াই চালিয়ে হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করতে। বিবিসি জানায়, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকলে তাদের কাছে থাকা জিম্মিদের পরিণতি ভালো হবে না; তাদের কফিনে করে ইসরায়েলে ফিরতে হবে। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা সোমবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একটি চুক্তি সইয়ের পরিবর্তে জোর খাটিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে নেতানিয়াহুর চাপ দেওয়ার পরিণতি হলো জিম্মিরা কফিনে করে পরিবারের কাছে ফিরবেন।
চলমান প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলে আংশিক অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। ৩৫০ ধরনের অস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়ার কথা থাকলেও ৩০টি মারণাস্ত্র তারা সরবরাহ থেকে বিরত থাকে। নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি এটাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে বর্ণনা করেন। ব্রিটেনের লেবার পার্টি থেকে সাসপেন্ড সংসদ সদস্য জারাহ সুলতানা বলেন, এটা প্রতীয়মান, ব্রিটেন শেষ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েল যে যুদ্ধাপরাধ সংঘটন করছে, তা মেনে নিল।
রয়টার্স জানায়, গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি না হওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, চুক্তির জন্য নেতানিয়াহু যথেষ্ট করছেন না। সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাইডেন এ কথা বলেন।
এ অবস্থায় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও হতাহতের প্রতি সংহতি জানাতে লোহিত সাগরে ইসরায়েলগামী আরও দুটি জাহাজে হামলা চালিয়ে ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠন হুতি।
- বিষয় :
- ইসরাইল
- ইসরায়েল
- বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু