ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

নাসরাল্লাহ হত্যা

কতগুলো ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করেছিল ইসরায়েল

কতগুলো ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করেছিল ইসরায়েল

ছবি: ইসরায়েল বিমান বাহিনীর সৌজন্যে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৭:৫৫ | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৬:২৭

ইসরায়েলের বিমান হামলায় শুক্রবার লেবাননভিত্তিক শিয়া ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহর নেতৃত্বে ছিলেন নাসরাল্লাহ।

নাসরুল্লাহকে হত্যার জন্য হামলা চালাতে যে যুদ্ধবিমানগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, তার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।

যুদ্ধাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ মতে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ২ হাজার পাউন্ড ওজনের (প্রতিটি) বোমা (বাংকার-বাস্টার) বহন করেছিল।

ভিডিওর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নাসরুল্লাহর ওপর হামলায় কমপক্ষে আটটি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইসরায়েল। যুদ্ধবিমানগুলো ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমায় সজ্জিত ছিল। বোমাগুলোর প্রতিটির ওজন প্রায় ২ হাজার পাউন্ড। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিএলইউ-১০৯ বোমাও ছিল।

বাংকার-বাস্টার বোমা কী

মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক বিস্ফোরক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ট্রেভর বল বলেন, বিস্ফোরণের আগে ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারে ‘বাংকার–বাস্টার’ বোমা। নির্ভুল আঘাত হানার একটি নির্দেশিকা ব্যবস্থা যুক্ত থাকে এই বোমায়। বোমাটি ৩০ মিটার গভীরে লক্ষ্যে পৌঁছে বিস্ফোরিত হতে পারে।

জিবিইউ-২৮ মডেলের বোমাটির ডিজাইন করেছিলেন আলবার্ট এল ওয়েইমর্টস। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াটারভিলিয়েট কোম্পানি বোমাটি তৈরি করে। ২০০৩ সালে অপারেশন ডেজার্ট স্টর্মের সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রথম এ বোমার ব্যবহার করে। সম্পূর্ণ লেজার গাইডেড বোমাটির ওজন ২০০০ থেকে ৪০০০ হাজার (৯০০-১৮০০ কেজি) পাউন্ড হয়ে থাকে।

নাসরাল্লাহকে হত্যায় কতগুলো বোমার ব্যবহার হয় 

ইসরায়েলের সংবাদ মাধ্যমের বরাতে আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নাসরাল্লাহকে হত্যায় ইসরায়েল ৮৫টি বাংকার-বাস্টার বোমা ব্যবহার করে। 

তবে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী জনবহুল এলাকায় বাস্টার বোমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। বৈরুতের দাহিয়েহ হল একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এই বোমার ব্যবহারের ফলে সেখানকার একাধিক আবাসিক ভবন ধসে সমতলে পরিণত হয়।

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে আটটি যুদ্ধবিমান ব্যবহারের কথা বলা হয়। এসব যুদ্ধবিমানগুলোয় অন্তত ১৫টি ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা বহন করা হয়েছিল।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতসহ বিভিন্ন স্থানে শুক্রবার রাতভর বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। জানা যায়, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টারে সংগঠনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও অন্য নেতাদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।

এরপর হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার খবর জানায় আইডিএফ। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক হিজবুল্লাহ বিবৃতি না দিলেও পরে হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর খবর জানায় সংগঠনটি।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখানে নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে হামলা অব্যাহত রাখবে তার দেশ। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরপরই লেবাননে জোরালো হামলা চালানো হয়েছে।

১৯৬০ সালে জন্ম হাসান নাসরুল্লাহর। ৬৪ বছর বয়সী নাসরুল্লাহ বেড়ে উঠেছেন বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হামুদ এলাকায়। বাবা আবদুল করিম ছিলেন একজন সাধারণ সবজি বিক্রেতা। তার ৯ সন্তানের মধ্যে নাসরুল্লাহ ছিলেন সবার বড়।

১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়লে হাসান নাসরুল্লাহ শিয়া মুভমেন্ট ‘আমাল’–এ যোগ দেন। পরে ১৯৮২ সালে আরও কয়েকজনের সঙ্গে দলটি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠার কথা জানানো হয়। এতে যোগ দেন হাসান নাসরুল্লাহ।

হিজবুল্লাহ শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে চিহ্নিত করে ‘ইসলামের প্রধান দুই শত্রু’ হিসেবে। সেই সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে ধ্বংস করার ডাক দেয় তারা। দেশটিকে আখ্যায়িত করে মুসলিমদের ভূমি দখলকারী হিসেবে।

১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরায়েলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তার পূর্বসূরি আব্বাস আল–মুসাবি। হিজবুল্লাহ প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া ছিল হাসান নাসরুল্লাহর প্রথম কাজ। সে অনুযায়ী ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন তিনি।

নাসরুল্লাহ লেবাননের দক্ষিণে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গেও তার যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। একপর্যায়ে ২০০০ সালে সেখান থেকে পিছু হটে দেশে ফিরে যান ইসরায়েলি সেনারা। তবে নাসরুল্লাহর ব্যক্তিগত ক্ষতিও কম হয়নি। ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ দিতে হয় তার বড় ছেলে হাদিকে।

নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের পাশাপাশি ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণগত সহায়তা দিয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ইরানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটের এক সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে হিজবুল্লাহর।

দখলকৃত লেবাননি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের তাড়াতে প্রথমে একটি মিলিশিয়া দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল হিজবুল্লাহ। পরে এ দলকেই লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এক বাহিনীতে রূপ দেন নাসরুল্লাহ। সংগঠনটি এখন দেশের রাজনীতিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তারকারী একটি শক্তি।

সর্বশেষ হিজবুল্লাহ–ইসরায়েল উত্তেজনা বেড়ে যায় গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে। ওই দিন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার জের ধরে গাজায় নজিরবিহীন তাণ্ডব শুরু করে দেশটি। 

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যেই ইসরায়েলের অভ্যন্তর ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় রকেট হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ।

আরও পড়ুন

×