গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মিশরের

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ | ১০:২৮ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ | ১০:৩৩
কাতারের রাজধানী দোহায় পুনরায় শুরু হওয়া বছরব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আলোচনা এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কয়েকজন বন্দি বিনিময়ের জন্য গাজায় সীমিত পরিসরে দুই দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করেছে মিশর। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর রোববারের হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৫৩ ও লেবাননে ২১ জন নিহতের ঘটনায় দেশটি এ প্রস্তাব করে। অন্যদিকে এ হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। অবরুদ্ধ উত্তর গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও হতাহতের ঘটনাকে তিনি ‘ধ্বংসের ভয়াবহ মাত্রা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি কয়েকজন ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে গাজায় দুইদিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করেন তিনি। রোববার কায়রোতে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেল মাদজিদ তেবোউনের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রস্তাব দেন তিনি। স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে ১০ দিনের মধ্যে আলোচনা আবার শুরু করা উচিত।
দোহায় ইসরায়েল ও মিসরীয় প্রতিনিধিরা পুনরায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করেছেন। আশা করা হচ্ছে, দুই দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব স্থায়ী বিরতিতে যাওয়ার একটা চেষ্টা।
গত বছরের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। সম্প্রতি লেবাননেও ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে তারা। এসব হামলায় সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও হিজবুল্লাহর প্রধান নিহত হওয়ার পর ১ অক্টোবর ইসরাইলে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। গত ছয় মাসের মধ্যে এটি ছিল ইসরায়েলে ইরানের দ্বিতীয় হামলা। এ নিয়ে গত সপ্তাহে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছিলেন, ইসরাইলের ক্ষতি করার চেষ্টার জন্য শত্রুদের ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।
শুক্রবার রাতে ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বিস্ফোরণে তেহরানের আশপাশের এলাকাগুলো কেঁপে ওঠে। হামলার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বাংকারের মধ্যে ছিলেন। তেলআবিবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে একটি ভূগর্ভস্থ কক্ষে (বাংকার) ছিলেন তারা। সেখান থেকে তারা এই হামলার বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানে ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা চালাচ্ছে। এক বিবৃতিতে দেশটির সামরিক বাহিনী বলেছে, ইসরায়েলে ইরানের হামলার জবাবে তারা ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলোতে সুনির্দিষ্টভাবে হামলা চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনের গাজায় বিগত এক বছর ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডটিতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৭ হাজারের বেশি শিশু। গাজা প্রশাসনের জনসংযোগ বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কাতারভিত্তিক বার্তা সংস্থা আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৪২ হাজার ৮৮৫ জন নিহত হয়েছেন। এই সময়ে আহত হয়েছে অন্তত ১ লাখ ৫৪৪ জন। গাজার জনসংযোগ কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় চলা ইসরায়েলের ৩৮৫ দিনের আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৩৮টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে ইসরায়েল। এসব হত্যাকাণ্ডে ৪২ হাজার ৮৮৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের ৪০ শতাংশ অর্থাৎ, ১৭ হাজার ২১০ জন শিশু। এ সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় এক হাজার ৪৭ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার জরুরি সেবা বিভাগের ৮৩ কর্মী নিহত হয়েছেন এবং সাংবাদিক নিহত হয়েছে ১৭৭ জন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২০৬টি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অর্থাৎ, এসব পরিবারের সবাই মারা গেছেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি অবরোধ ও গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে রাখায় ৩৭ ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন। এ ছাড়া ৩ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি শিশু অপুষ্টির কারণে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।