ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

আরব আমিরাতের শ্রমবাজার বন্ধ

আরব আমিরাতের শ্রমবাজার বন্ধ

ফাইল ছবি

 কামরুল হাসান জনি, ইউএই 

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৬

সৌদি আরবের পর মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু দেশটিতে বেশ কিছু দিন ধরে বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় সব ধরনের ভিসা বন্ধ। এতে রুদ্ধ হয়ে আছে বৃহত্তর এই শ্রমবাজারের দুয়ার। ভিসা বন্ধ থাকায় ভ্রমণে আগ্রহীরা যেমন হতাশ, তেমনি পিছিয়ে পড়ছেন কর্মসংস্থান প্রত্যাশীরাও। এ ছাড়া ভিসা জটিলতায় গত বছরের তুলনায় এ বছর দেশটিতে কর্মী পাঠানো প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যদিকে আমিরাত প্রবাসীরা প্রতিষ্ঠান ও নিয়োগদাতা পরিবর্তনের সুযোগবঞ্চিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেকে। তবে আমিরাতের ঘোষিত চলমান সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশটিতে থাকা প্রবাসী ও শুধু দুবাইয়ে শিক্ষাগত সনদধারী চাকরিপ্রত্যাশীদের ভিসা মিলছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময় কর্মসংস্থান ভিসা বন্ধের কারণে আমিরাতে কর্মী পাঠানো অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ২০১২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে বার্ষিক ৩০ হাজারের নিচে নেমে আসে বাংলাদেশি কর্মী যাওয়ার সংখ্যা। এ অবস্থা চলতে থাকে প্রায় ৯ বছর। এর পর ২০২২ ও ’২৩ সালে ভিজিট ভিসা ও শিক্ষাগত সনদ প্রদান শর্তে কর্মসংস্থান ভিসা দেয় আমিরাত। এ সময় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র পেয়ে দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ পান প্রায় দুই লাখ কর্মী। চলতি বছর আবারও ভিসা বন্ধ করা হলে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কমতে থাকে।
বিএমইটির তথ্য বলছে, বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে গত বছর আমিরাত গেছেন ৯৮ হাজার ৬১৪ জন। চলতি বছর পুরুষ ও নারী কর্মী মিলে গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে গেছেন মাত্র ৪৭ হাজার ১৬৫ জন।
আজমান আল মানামা বিজনেসম্যান সার্ভিস এলএলসির বিজনেস কনসালট্যান্ট কামাল হোসাইন খান সুমন বলেন, বাংলাদেশিদের জন্য এই মুহূর্তে ভিজিট ভিসা, ফ্যামিলি ভিসা, কর্মসংস্থান ভিসা, বিনিয়োগকারী ভিসা, গোল্ডেনসহ প্রায় সব ধরনের ভিসা বন্ধ রেখেছে আমিরাত।
বারবার বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতার বিষয়ে নিজেদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, সঠিক প্রশিক্ষণ ও দক্ষ শ্রমিকের অভাবকে দায়ী করছেন প্রবাসীরা। বিশেষ করে ভিজিট ভিসায় গিয়ে দেশে ফেরত না আসা, শিক্ষাগত সনদ জালিয়াতি ও দেশটির আইন ভঙ্গের মতো নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশিদের নামে। এ জন্য কর্মী পাঠানোর আগেই এসব বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম শামীম বলেন, অনেকেই আইনকানুন না জেনে বিদেশে পাড়ি দেন। যে কারণে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেন। এটি সামগ্রিকভাবে সবার ওপর প্রভাব ফেলে। তাই কর্মী পাঠানোর আগে যে দেশে যাবেন, সে দেশের নিয়মকানুন সম্পর্কে সরকারকে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে ভিসা সংকটের পাশাপাশি দীর্ঘদিন আমিরাতে থাকা প্রবাসীরা নিয়োগদাতা পরিবর্তন নিয়েও জটিলতায় ভুগছেন। প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ বন্ধ থাকায় সাধারণ শ্রমিকদের মতো বিপাকে পড়েছে আমিরাতে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা ও অভ্যন্তরীণ মালিক পরিবর্তন বিষয়ে মিশন কর্মকর্তারা অবগত। এ সমস্যা নিরসনে কূটনৈতিক পর্যায় থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ে সমস্যাগুলো সমাধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আমিরাতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। সমস্যাগুলো তুলে ধরে দ্রুত সমাধানের জন্য তাদের অনুরোধ করা হচ্ছে।
 

আরও পড়ুন

×