বিশ্বের উষ্ণতম বছর ২০২৪ সাল
ছবি: বিবিসি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ২১:৪১
পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে এক দশক আগে বিশ্বনেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখবেন। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সদ্য শেষ হওয়া বছর, ২০২৪ সালের পুরো ১২টি মাসই অতিক্রম করে গেছে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি উষ্ণতার সীমা।
বৈশ্বিক উষ্ণতার অন্যতম প্রধান ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কোপার্নিকাস ক্লাইমেট সার্ভিস শুক্রবার জানিয়েছে, প্রাক্-শিল্প যুগের তুলনায় গত বছরের সবগুলো মাসের তাপমাত্রা অন্তত ১ দশমিক ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতারা উষ্ণতার যে প্রতীকী সীমা নির্ধারণ করেছিলেন, ২০২৪ সেটি অতিক্রমকারী প্রথম ক্যালেন্ডার সাল এবং একই সঙ্গে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। প্রাক্-শিল্প যুগ অর্থাৎ, ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের দিকে মানুষ প্রচুর পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো শুরু করেছিল। আর তখন থেকেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা।
গবেষকদের তথ্য অনুসারে, বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে ২০২৩ সালেই। ওই বছর বিশ্বে উষ্ণায়নের গড় মাত্রা ছিল ১ দশিমক ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ২০২৪ সালের গড় বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬২ ডিগ্রিতে। শুধু তাই নয়, জানুয়ারিতে এ মাত্রা ছিল ১ দশমিক ৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সাম্প্রতিক তাপমাত্রার এই রেকর্ডকে ‘জলবায়ু বিপর্যয়’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, ধ্বংসের এই পথ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এবং নষ্ট করার মতো হাতে কোনো সময় নেই। আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা উষ্ণায়নের এই বিশ্ব রেকর্ডকে ‘মানবজাতির জন্য সতর্কবার্তা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০১৮ সালের জাতিসংঘের এক যুগান্তকারী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উষ্ণায়নের মাত্রা দেড় থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তীব্র তাপপ্রবাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বন্যপ্রাণী হ্রাসের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি অনেক বাড়বে।
কোপার্নিকাসের উপপরিচালক সামান্থা বার্গেস বলেন, আমাদের জলবায়ুর ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলছে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা এবং দাবানলের মতো মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া এল নিনোর প্রভাবে জলবায়ুর চরম বৈরী পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, যা রেকর্ড উষ্ণতা বৃদ্ধি করেছে। উষ্ণতার এই পরিবর্তন ১ লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমাজন অববাহিকায় বিধ্বংসী খরা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু অংশে শীতের তাপমাত্রা, দক্ষিণ আমেরিকায় মারাত্মক দাবানল এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় রেকর্ড বৃষ্টিপাত ও চলমান ভয়াবহ দাবানলসহ চরম বিপর্যয় দেখা গেছে। মানবজাতিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ভয়াবহ পরিণতি থেকে বাঁচাতে এখনই কার্বন নিঃসরণের হার কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর বিবিসির