ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিবিসির প্রতিবেদন

কার্টার-কিম সাক্ষাৎ আটকে দিয়েছিল পারমাণবিক যুদ্ধ

কার্টার-কিম সাক্ষাৎ আটকে দিয়েছিল পারমাণবিক যুদ্ধ

জিমি কার্টার ও কিম ইল সাং

 সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৩:১৭

তিন দশক আগে বিশ্ব এক পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের উত্তর কোরিয়া সফর সবকিছু বদলে দেয়। ১৯৯৪ সালের জুনে কার্টার উত্তর কোরিয়ার তৎকালীন নেতা কিম ইল সাংয়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য পিয়ংইয়ংয়ে পৌঁছান। এটি ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা। কারণ, সেই সময়ই প্রথমবার কোনো বর্তমান বা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়া সফর করেছিলেন।

এ সফর ছিল কার্টারের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপের অনন্য দৃষ্টান্ত। অনেকের মতে, এটি অল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ এড়াতে সাহায্য করেছিল, যা লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারত। এ ছাড়া এটি পিয়ংইয়ং ও পশ্চিমাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একটি যুগের সূচনা করেছিল। এর কোনো কিছুই হতো না যদি না কার্টার তাঁর কূটনৈতিক চাল চালতেন। 

উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ জন ডেলুরি বিবিসিকে বলেন, ‘কিম ইল-সাং ও বিল ক্লিনটন একটি সম্ভাব্য সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং কার্টার সেই ফাঁকা স্থানটি পূরণ করেন। সঠিক সময় এগিয়ে এসে সফলভাবে একটি আলোচনার পথ খুঁজে বের করেন তিনি।’ ১৯৯৪ সালের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা নিয়ে দুই দেশের আলোচনা চলাকালে ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সন্দেহ ছিল, চলমান আলোচনা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছিল। এর মধ্যেই উত্তর কোরিয়া ঘোষণা করে, তারা ইয়ংবিয়ন পারমাণবিক চুল্লি থেকে হাজার হাজার জ্বালানি রড পুনঃপ্রক্রিয়ার জন্য সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার আগে হওয়া একটি চুক্তির লঙ্ঘন, যেখানে এমন পদক্ষেপের জন্য আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ছিল। 

এ ছাড়া উত্তর কোরিয়া আইএইএ থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়। এতে ওয়াশিংটনের সন্দেহ বেড়ে যায়। তাদের ধারণা ছিল, পিয়ংইয়ং সম্ভবত একটি অস্ত্র তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে মার্কিন কর্মকর্তারা পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে দেন। ওয়াশিংটন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিতেও শুরু করে, যার মধ্যে ছিল জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি। পরে কিছু সাক্ষাৎকারে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তারা ইয়ংবিয়নে বোমা ফেলা বা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া নিয়েও ভেবেছিলেন, যা কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ বাধানোর পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল ধ্বংস করে দিতে পারত বলে তাদের ধারণা। এ উত্তেজনাকর পরিবেশেই কার্টার তাঁর পদক্ষেপ নেন। কিম ইল-সাং বহু বছর ধরে ব্যক্তিগতভাবে কার্টারকে উত্তর কোরিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিলেন।

কার্টার এবং তাঁর স্ত্রী রোজালিন ১৯৯৪ সালের জুন মাসে উত্তর কোরিয়ায় চার দিনের সফরে যান। কিন্তু তাঁর এই সফরে সম্মতি ছিল মার্কিন প্রশাসনের। কার্যত উত্তর কোরিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে নিজের সরকারকে রাজি করানো ছিল তাঁর চ্যালেঞ্জ। তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর তাঁর সহায়ক হিসেবে সামনে আসেন। অবশেষে সফরের অনুমতি মেলে। ১৫ জুন কার্টার তাঁর স্ত্রী রোজালিন, একটি ছোট দল ও টিভি ক্রু নিয়ে উত্তর কোরিয়া পাড়ি জমান।

২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতের পথ সুগম করতেও কার্টারকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। কারণ, ‘কার্টার এটা সম্ভব করে দিয়েছিলেন’ যে একজন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়ার নেতা সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন।

আরও পড়ুন

×