হাসপাতালে হামলা, জ্যেষ্ঠ হামাস নেতা নিহত
ইসরায়েলের পরিকল্পনায় পুরো গাজার দখল

ফাইল ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫ | ০১:১৩
যুদ্ধবিরতি ভেঙে অব্যাহতভাবে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকার মানুষ যখন সাহরির সময় একত্রিত হন, তখন চালানো হচ্ছে হামলা। যারা নিহত হচ্ছেন, অধিকাংশই নারী ও শিশু। গতকাল সোমবার এক দিনে আরও ৬৫ জনের প্রাণ গেছে। এর মধ্যে ফাঁস হয়েছে ইসরায়েলের ভয়ংকর এক পরিকল্পনা। তারা পুরো গাজা উপত্যকার দখল নিতে চায়। এ জন্য চালানো হবে পূর্ণাঙ্গ স্থল অভিযান। গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাবে অনুমোদনও দিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর একটি ক্লাসিফায়েড পরিকল্পনার বরাত দিয়ে গতকাল সোমবার টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানায়। জেরুজালেমভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানায়, চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসি সফর করবেন ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়াদি সম্পর্কিত মন্ত্রী রন ডেরমার। সেখানে তিনি ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুরো গাজা উপত্যকার দখল নেওয়া বিষয়ে আলোচনা করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখন যেভাবে ত্রাণ গাজার বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে, সেভাবে এটি সরবরাহ করা হবে না। ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ।
এ প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় একটি বিতর্কিত প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। সিএনএন জানায়, ওই প্রস্তাব অনুযায়ী গাজার সব ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুতির (গাজা থেকে অন্যত্র) কথা বলা হয়েছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের কিছু হলে তা হবে জাতিগত নিধনের শামিল। রোববার ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী ও কট্টরপন্থি নেতা বেজালাল স্মোট্রিচ বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের উত্থাপিত প্রস্তাবটি নিরাপত্তা কাউন্সিলে অনুমোদন পেয়েছে। সেখানে গাজার বাসিন্দাদের ‘স্বেচ্ছায়’ অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের প্রসঙ্গ রয়েছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের গণবাস্তুচ্যুতি মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে বিবেচিত হতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে গাজায় অব্যাহতভাবে নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। রোববার রাতে গাজার আল নাসের হাসপাতালে বোমা হামলায় হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হন। সংগঠনটি বিবিসিকে জানায়, তাদের অর্থনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কিত প্রধান ইসমাইল বারহউম খান ইউনিসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। চার দিন আগে ইসরায়েলের হামলায় আহত হয়ে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
সোমবার এক দিনে বিমান হামলায় সব মিলিয়ে ৬৫ জন নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরুর পর গাজায় সব মিলিয়ে ৭৩০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০০ জনই নারী ও শিশু। হামাস বলছে, তাদের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। প্রাণ গেছে আলজাজিরার সাংবাদিক হোসাম সাবাতের। সোমবার উত্তর গাজায় তাঁর গাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। গত নভেম্বরেও তিনি হামলায় আহত হন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আহত এক লাখের বেশি। জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, গত কয়েক দিনে ইসরায়েলের হামলায় ১ লাখ ২৪ হাজার ফিলিস্তিনি নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এনেছে মিসর। সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, এ প্রস্তাবটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ওয়াশিংটন ও হামাস। কিন্তু ইসরায়েল এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। রোববার কায়রোতে নতুন যুদ্ধবিরতির জোর দাবি জানান সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কালাস। তিনি ইসরায়েলের হামলার ‘জোর বিরোধিতা’ করেন।
এদিকে গাজায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্য নীতি পরিবর্তনের কথা ভাবছে চীন। আরব নিউজ জানায়, গত এক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে চীন ‘বেশি বেশি বাণিজ্য করো, বেশি বেশি মুনাফা কামাও; রাজনৈতিক ঝুঁকিতে যেও না’ নীতি নিয়ে চলেছে। নতুন প্রেক্ষাপটে বেইজিং কূটনৈতিক নজর পরিবর্তনের বিষয়ে ভাবছে। ইতোমধ্যে এটি গত মাসে জাতিসংঘের দেওয়া ভাষণে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়্যাং ইর বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, ‘ফিলিস্তিন প্রশ্ন মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুর কেন্দ্রে আবর্তিত।’
- বিষয় :
- ইসরায়েল