ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

প্রমোদ

সমুদ্রতীরে স্বর্গরাজ্য ধনকুবেরদের

সমুদ্রতীরে স্বর্গরাজ্য ধনকুবেরদের

মারেতেরার একটি আবাসিক ভবন। সিএনএন

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০০:৫৩ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০৭:০৪

মোনাকো। ধনকুবেরদের স্বর্গরাজ্য। আয়তন প্রায় ২ বর্গকিলোমিটার। বাসিন্দা প্রায় ৩৯ হাজার। প্রতি ১০ জনের সাতজনই শতকোটি ডলারের মালিক। নানা অট্টালিকা নির্মাণ করে বাসিন্দারা মোনাকোকে করে তুলেছেন অনন্য। সমুদ্রের ওপর অনেক ভাসমান কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এতে দেশটির স্থলভাগের আকৃতি বেড়েছে ৩ শতাংশ।

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বে ভূমধ্যসাগরের তীরের এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম ও সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ। আকারে এটি ভ্যাটিকান সিটির চেয়েও ছোট। সেখানে ভূমধ্যসাগরের বুকে ১৫ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে মারেতেরা নামে নতুন ‌‘ইকো বিভাগ’। এটি কৃত্রিমভাবে সমুদ্র ভরাট করা বানানো ভূখণ্ড। গত ৩ ডিসেম্বর মোনাকোর প্রিন্স দ্বিতীয় আলবার্ট এর উদ্বোধন করেন। দুইশ কোটি ডলারের এ প্রকল্পে রয়েছে প্রমোদতরী নোঙর করার ডক। আছে বিলাসবহুল ভবন। এগুলো থেকে একই সঙ্গে সমুদ্র ও তীরে পাহাড়ের দৃশ্য দেখা যায়।

নতুন এ বসতি তৈরির ঘোষণা আসে ২০১৩ সালে। এর পর সাগরের বুক চিরে তৈরি করা হয় সিমেন্টের ব্লক। সেগুলো থেকে পানি সেচে ৭ লাখ ৫০ হাজার টন বালু দিয়ে ভর্তি করা হয়। কৃত্রিমভাবে তৈরি এই ভূখণ্ডে যেসব স্থাপনা নির্মাণ করা হবে, সেগুলোর অর্ধেকের বেশি উন্মুক্ত থাকবে সর্বসাধারণের জন্য। এর মধ্যে আছে পার্ক, সাইকেল চলার রাস্তা, ডক ও শপিংমল। এসবের ফাঁকে রোপণ করা হয়েছে নানা জাতের গাছ, যা পরিবেশকে সুন্দর করে তুলেছে। এ জন্য ১ হাজার গাছের চারা ইতালির তুসকানি থেকে আনা হয়।

নতুন এ ভূখণ্ডে যেসব ব্যক্তিগত বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে ১০০টির বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ও ১০টি প্রাসাদসদৃশ বাড়ি রয়েছে। নরম্যান ফোস্টার ও তাদাও আন্দোর মতো বিশ্বখ্যাত স্থপতিরা এখানকার অবকাঠামো তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ফ্রান্সের দৃষ্টিনন্দন ভবন ‘সেন্টার পম্পিদো’র সহ-স্থপতি ইতালির রেঞ্জো পিয়ানোও অবকাঠামো নকশায় সম্পৃক্ত ছিলেন।

নতুন এ বসতির অ্যাপার্টমেন্টগুলো ব্যয়বহুল। ধারণা করা হয়, সমুদ্রের মাঝে তৈরি শহরটির অ্যাপার্টমেন্টের এক বর্গফুট জায়গা কিনতে প্রায় ১০ হাজার ডলার খরচ করতে হয়েছে ক্রেতাদের। ছোট দেশ হওয়ায় মোনাকোয় খালি জমি পাওয়া কঠিন। এ জন্য সাগরতীরে বালু ভরাট করে বিশেষ এ বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর আগে ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালে বালু ভরাট করে দেশটির লারভোত্তো ও ফোন্তভিয়েল্লে বিভাগ সম্প্রসারিত করা হয়। মোনাকো সরকার প্রতিটি সম্পত্তি বিক্রি থেকে ২০ শতাংশ কর পেয়ে থাকে।

সমুদ্র ভরাট করে যখন নতুন বসতি তৈরি করা হচ্ছিল, তখন এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। পরিবেশবাদীরা বলেছিলেন, এটি মোনাকোর সামুদ্রিক পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলবে, যেখানে অন্তত ৬০ প্রজাতির প্রবাল রয়েছে। ২০০৯ সালে এমন একটি উদ্যোগ নিয়েও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়। প্রিন্স দ্বিতীয় আলবার্ট সামুদ্রিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পর ওই প্রকল্পের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে দেশটি।

তবে মারেতেরা ইকো বিভাগটির ডেভেলপাররা বলছেন, সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি যেন খুবই কম হয়, সে জন্য তারা বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ করেছেন। এক্ষেত্রে সমুদ্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা, মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য নতুন আবাস তৈরি করেছেন তারা।  সূত্র: সিএনএন।

আরও পড়ুন

×