‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে গুজরাটে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান

ছবি: বিবিসি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ২২:৫৯ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ২৩:২১
গুজরাটের পুলিশ বলছে, শনিবার ভোর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে তারা আটক করেছে, যারা বাংলাদেশি বলে সন্দেহ। তবে নিশ্চিতভাবে ৪৫০ জনকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা গেছে বলে সোমবার জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের মহা-নির্দেশক বিকাশ সহায়।
সংবাদসংস্থা পিটিআই সোমবার রাতে বিকাশ সহায়কে উদ্ধৃত করে জানায়, ‘নথির ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত এটা নিশ্চিত করা গেছে যে, ৪৫০ জন বাংলাদেশি বেআইনিভাবে এখানে ছিলেন। আটক বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মনে হচ্ছে, একটা বড় সংখ্যায় বেআইনি বাংলাদেশিদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারব।’ খবর বিবিসি বাংলার
শনিবার ভোর থেকে প্রথমে আহমেদাবাদ ও সুরাতে এবং পরের দুদিনে পুরো গুজরাটে ‘বেআইনি বাংলাদেশি’ আটক অভিযান চালায় গুজরাট পুলিশ। ‘রাত তিনটা নাগাদ পুলিশ আসে আমাদের বাসায়। আমার স্বামী, বাচ্চা- সবার আধার কার্ড দেখতে চায়। তারপর তারা আমার স্বামী ও দুই ভাগ্নেকে নিয়ে যায়। ওরা বলেছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে আমার স্বামী। কিন্তু তিনদিন হতে চলল, তিনি ফেরেননি’- বলছিলেন সুরাত থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক হওয়া সুলতান মল্লিকের স্ত্রী সাহিনা বিবি।
যেদিন প্রথম অভিযান শুরু হয়, সেদিনই আটক হন মল্লিক ও তার দুই কিশোর ভাগ্নে। বাংলাদেশি সন্দেহেই তাদের আটক করা হয়, তবে মল্লিকের পাসপোর্ট ও ১৯৯৩ সালের একটি জমির দলিল দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর অঞ্চলের বাসিন্দা।
তার স্ত্রীর কথায়, ‘প্রথমে তো জানতেই পারিনি যে কোন থানায় নিয়ে গেছে, কোথায় রেখেছে। শনিবার বেলার দিকে আমার স্বামী পুলিশের একটা নম্বর থেকেই ফোন করে জানায় যে তাদের কোনও একটা গুদাম ঘরে রেখেছে। সব নথি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলেন আমার স্বামী। পাসপোর্ট, জমির দলিল- যা যা প্রমাণ ছিল, সব পাঠিয়েছি। কিন্তু তারপর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত আর কোনও যোগাযোগ নেই। এদিকে আমার শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার ছেলের এই দশা দেখে, আমার বড় মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। মাত্র একবছর হলো আমি গুজরাটে এসেছি– এখন কোথায় স্বামীর খোঁজ করতে যাব বুঝতে পারছি না।’
অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে, এমন সংগঠন 'পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ' গুজরাটের ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর একটি হেল্পলাইন খুলেছে। প্রিয়জনের খোঁজ পাওয়ার জন্য ওই হেল্প লাইনে দুদিনে একশ'র বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানাচ্ছিলেন সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক।
‘গুজরাটে সংখ্যাটা বড়, তাই বিষয়টা ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা আর মহারাষ্ট্রেও পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলমানদের 'বাংলাদেশি' তকমা দিয়ে হেনস্থা করার ঘটনা সম্প্রতি খুব বেড়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে এই আশঙ্কা করেই আমরা গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটা চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কাজ যে কিছু হয়নি, দেখাই যাচ্ছে’- বলেন ফারুক।