হার মানতে রাজি নন ডোনাল্ড ট্রাম্প

তোফাজ্জল লিটন, নিউইয়র্ক
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ | ১৬:১৪
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত ডোনাল্ড ট্রাম্প নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। জো বাইডেনের জয়ের মধ্য দিয়ে তার এই নিঃসঙ্গ যাত্রার পথ প্রশস্ত হলো। বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতে বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি নিজেকে বারবার বিজয়ী দাবি করেছেন; অন্যদিকে প্রমাণহীন ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন। গতকাল শনিবারও টুইট করে পেনসিলভানিয়ায় ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। তবে তার সঙ্গে একমত নন নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতা। এ ইস্যুতে তার ক্ষমতাকালের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বেশিরভাগই তাকে সমর্থন করেননি। শুধু তাই নয়, ভোটের আগপর্যন্ত অকপটে তাকে সমর্থনকারী সংবাদমাধ্যমগুলোও এখন তার পাশে নেই। ক্রমে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন ট্রাম্প। গতকাল বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নন ট্রাম্প। দ্য গার্ডিয়ানে বলা হয়, বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রাম্প। সিএনএন জানাচ্ছে, জো বাইডেনের বিজয়ের খবর প্রকাশের কয়েক মুহূর্ত পরই ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, 'বাইডেন মিথ্যা জয়ের ভাব ধরার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন। তবে ভোটযুদ্ধ শেষ হওয়ার এখনও অনেক দেরি।' ওই বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের আইনি যুদ্ধ সোমবার থেকে শুরু হবে।
ট্রাম্প তার বিবৃতিতে বলেন, ভোটের ফলাফল এখনও নির্বাচনী কর্মকর্তারা প্রত্যয়ন করেননি এবং এগুলো আসলে সংবাদমাধ্যমের পূর্বাভাস মাত্র। অন্যদিকে কিছু সময় আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেন, ফিলাডেলফিয়ায় একটি বড় সংবাদ সম্মেলন হবে। তবে এই সম্মেলনের আর কোনো অর্থ আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সব পর্যায় থেকে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হলেও ট্রাম্প তার স্টাইলেই অভিযোগ করে যাচ্ছেন, পেনসিলভানিয়ায় জালিয়াতি হয়েছে। তার অভিযোগ, ভোটের দিন ৩ নভেম্বর রাত ৮টার পর হাজার হাজার ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ ভোটের সবই অবৈধ। এসব ভোট বাদ দিলে এ রাজ্যে তিনিই জয়ী হবেন। তবে দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি তিনি।
এখানে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো- সরকারিভাবে এখনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়নি। এ নিয়ে পরিবেশ ঘোলা করার চেষ্টা করতে পারেন ট্রাম্প। কারণ তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, পরাজয় স্বীকার করবেন না। তার এই অবস্থান শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেদিকটিতেও অনেকের নজর রয়েছে।
ট্রাম্পের ভিত্তিহীন দাবি ও অভিযোগ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরিকল্পনা নেই তার। উপরন্তু আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনড় তিনি। তবে বাইডেন শিবির থেকে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে হোয়াইট হাউস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে ট্রাম্পকে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে গায়ের জোরে কিছু করার নেই।
সিএনএনের খবরে শনিবার বলা হয়েছে, বাস্তব পরিস্থিতি বুঝিয়ে তাকে হোয়াইট হাউস ছাড়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে জুতসই একজন মানুষও খোঁজা শুরু করেছেন তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। কারণ, পরাজিত হয়েও বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বাগত জানাতে নারাজ ট্রাম্প। তার এই গোঁয়ার্তুমির কারণে সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের মৌলিক সৌন্দর্য নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি। ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার ব্যাপারে প্রস্তুত নন, এমনটি জানানোর পর অনেকেই তার পাশ থেকে সরে যাচ্ছেন। সিএনএনের এ-বিষয়ক প্রতিবেদনে কারা ট্রাম্পকে ছেড়ে যাচ্ছেন, তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়তে প্রস্তুত না হলেও তার শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কাডলো এর আগে সাফ জানিয়ে দেন, চূড়ান্ত ফলাফলে হেরে গেলে প্রেসিডেন্ট শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে তিনি আশা করছেন। কাডলো সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাই বলেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। আমরা আইনের শাসন মেনে চলি। প্রেসিডেন্টকেও তা মানতে হবে।
এদিকে, এখন পর্যন্ত ট্রাম্প তার হাতেগোনা কয়েকজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং দুই ছেলেসহ সবচেয়ে কাছের মানুষের পরামর্শে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন। ট্রাম্পের বড় ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র ও তার ওই উপদেষ্টারা আদালতে ভোটের ফল চ্যালেঞ্জ করতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেইসঙ্গে ট্রাম্পবিমুখ রিপাবলিকান নেতাদের তাদের দিকে ফেরানোর চেষ্টাও করছেন। এ বিষয়ে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোসসহ কয়েকজন উপদেষ্টা ট্রাম্পকে বাস্তব পরিস্থিতি না বুঝিয়ে উল্টো তার হাতের মুঠো থেকে নির্বাচন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তার মন জুগিয়ে চলেছেন। এর আগে ট্রাম্পের পক্ষে কথা বললেও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স গণতন্ত্রের জয়ে বিশ্বাসী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, শুক্রবার সকালে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ট্রাম্প টেলিভিশন দেখতে দেখতে তার পক্ষে খুব বেশি মানুষকে না দেখে আরও মুষড়ে পড়েন বলে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
অন্যদিকে, মিডিয়া মোগলখ্যাত রুপার্ট মারডকের মালিকানাধীন ফক্স নিউজ, নিউইয়র্ক পোস্ট ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল- এই তিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম তাদের পাঠক বা দর্শকদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়ের ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে শুরু করেছে। সেইসঙ্গে তারা ট্রাম্পের কাছ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতেও শুরু করেছে। অথচ রুপার্ট মারডকের সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পপন্থি হিসেবে বহুল পরিচিত।
২০১৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার সময় ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিল ফক্স নিউজ। এখন তারা ট্রাম্পের বিদায়ের বিষয়ে দর্শকদের সতর্ক করে দিচ্ছে। কীভাবে তার বিদায় নেওয়া উচিত, সে বিষয়েও তারা পরামর্শ দিতে শুরু করেছে। এ কারণে মারডকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।