আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন মেগান

অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মেগান। ছবি: গেটি ইমেজেস
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১ | ০৯:০৪ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ | ০৯:১৪
ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কল বলেছেন, ব্রিটিশ রাজ পরিবারে তার জীবন এতো বেশি কঠিন হয়ে পড়েছিল যে এক সময় তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সময় রোববার রাতে মার্কিন টিভি ব্যক্তিত্ব অপরা উইনফ্রের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মেগান বলেন, তিনি যখন সাহায্য চেয়েছেন তখন সেটি পাননি। সবচেয়ে খারাপ সময়টি ছিল যখন রাজপরিবারের এক সদস্য হ্যারিকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে তাদের সন্তান হলে সে 'কতটা কালো' হতে পারে। খবর বিবিসির
প্রিন্স হ্যারিও বলেন, তিনি যখন সরে আসতে চেয়েছিলেন, তখন তার বাবা প্রিন্স চার্লসও তার ফোন ধরাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
সিবিএস-এর দুই ঘণ্টার এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যে সোমবার আইটিভিতে সম্প্রচারিত হবে। এ সাক্ষাৎকারে বিশ্বখ্রাত এই দম্পতি বর্ণবাদ, মানসিক স্বাস্থ্য, গণমাধ্যমের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ও রাজপরিবারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা জানান, আসছে গ্রীষ্মে তারা আবার বাবা-মা হতে যাচ্ছেন এবং এবার মেয়ে সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন মেগান।
২০২০ সালের মার্চে রাজ পরিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের পর এই দম্পতি ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত মাসেই তারা ঘোষণা দেন, রাজপরিবারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য হিসেবে তারা আর ফিরবেন না।
মেগান বলেন, একসময় তিনি একাকী বোধ করতে থাকেন, যখন তাকে জানানো হয়েছিল, তিনি কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না। এমন এক সময়ও গেছে যখন তিনি মাসের পর মাস বাড়ি থেকে বের হননি।
ডাচেস অব সাসেক্স আরও বলেন, তিনি এক সময় ভাবতে শুরু করেন যে, এর চেয়ে বেশি একা হওয়া সম্ভব নয়।
এসব সময়ে তিনি নিজের ক্ষতি বা আত্মহত্যার চিন্তা করেছিলেন কিনা- উইনফ্রের এমন প্রশ্নে মেগান বলেন, হ্যা। এটা খুব বেশি স্পষ্ট ছিল। খুব স্পষ্ট এবং ভয়ংকর। সেসময় বুঝতে পারছিলাম না যে কার কাছে যাবো।
মেগান বলেন, গর্ভবতী থাকা অবস্থায় হ্যারির সঙ্গে রয়াল অ্যালবার্ট হলে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সময়কার এক ছবির কারণে আতঙ্কবোধ করেছিলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে সকালে হ্যারির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ হয়েছিল তার।
মেগান বলেন, ওই রাতে ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন কারণ তিনি অনুভব করছিলেন যে, তিনি আর একাকী বোধ করতে চান না। অনুষ্ঠানের সময় হ্যারি তার হাত শক্ত করে ধরে ছিলেন।
রাজ পরিবার কেন তার ছেলে আর্চিকে প্রিন্স ঘোষণা করেনি অপরার এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমার গর্ভবতী থাকার মাসগুলোতে আলোচনা চলছিল যে তাকে হয়তো কোনো পদবি দেওয়া হবে না। জন্মের পর তার ত্বক কতটা কালো হবে তা নিয়েও উদ্বেগ ও আলোচনা চলেছে। এসব কথা হ্যারিকে বলা হয়েছিল এবং তার কাছ থেকেই এসব বিষয় জেনেছি।'
১৯১৭ সালের একটি আইনের কারণে ডিউক এবং ডাচেস অব সাসেক্সের সন্তানরা স্বাভাবিকভাবেই প্রিন্স বা প্রিন্সেস হবেন না, যদি না রানি কোনো পদক্ষেপ নেন।
অপরা জিজ্ঞেস করেন যে তার সন্তান 'বেশি বাদামি বর্ণের' হলে নিয়ে কোনো সমস্যা হতে পারে ভেবে উদ্বিগ্ন ছিলেন কিনা তারা। জবাবে মেগান বলেন, 'এটা যদি আপনার অনুমান হয়ে থাকে, তাহলে সেটি বেশ নিরাপদ অনুমানই মনে হচ্ছে।'
এ ধরণের মন্তব্য কে করেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার মনে হয় এটা তাদের জন্য খুব ক্ষতিকর হবে।'
হ্যারিও সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে অসম্মতি জানিয়ে বলেন, 'ওই আলোচনা আমি কখনোই কাউকে বলবো না। সে সময়ে এটা বেমানান ছিল এবং আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। ওই তিন বছরে আমার পরিবারের কেউই কোন কথা বলেনি। এটা কষ্টকর।'
সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে পর হ্যারি পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন যে, তার দাদী রানির সঙ্গে তার সম্পর্ক খুবই ভালো। তারা দুজন প্রায়ই কথা বলেন। তবে তার বাবা প্রিন্স অব ওয়েলসের সঙ্গে তার সম্পর্ক তেমন ভালো নেই। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আসলেই ভিন্ন।
তিনি আরও বলেন যে, তার পরিবার তাকে আর্থিকভাবেও সহায়তা করা বন্ধ করে দিয়েছে। তার ভাই আর বাবাকে রাজপরিবারের ব্যবস্থার ফাঁদে আটকে পড়া উল্লেখ করে হ্যারি বলেন, 'তারা সেখান থেকে বেরুতে পারবে না।'
প্রিন্স উইলিয়ামের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা দুজন ভিন্ন পথে রয়েছেন।