ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

ভাইরোলজিস্টকে খুনের হুমকি, সাবেক সেনা সদস্যকে খুঁজছে বেলজিয়াম পুলিশ

ভাইরোলজিস্টকে খুনের হুমকি, সাবেক সেনা সদস্যকে খুঁজছে বেলজিয়াম পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২১ | ২৩:৫৪ | আপডেট: ০৫ জুন ২০২১ | ২৩:৫৯

টেলিভিশন পর্দায় নিয়মিত হাজির হয়ে করোনাভাইরাস সতর্ক করায় প্রথম সারির ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক মার্ক ভ্যান রানস্টকে খুন করতে হন্যে হয়ে ঘুরছে বেলজিয়ামের সাবেক সেনা সদস্য জার্জেন কানিংস। 

চরম ডানপন্থি মতবাদে জড়িয়ে পড়ার পর সেনাবাহিনীর ব্যারাক থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়া শ্যুটিং প্রশিক্ষক জার্জেন কানিংসকে খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বেলজিয়ামের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বেলজিয়াম পুলিশের সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর তালিকায় থাকা কানিংস ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক মার্ক ভ্যান রানস্টের উপর মহাবিরক্ত হয়ে তাকে খুন করতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ইতোমধ্যে ভ্যান রানস্টকে সপরিবারে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নিরাপদ আস্তানায় ভ্যান রানস্টকে সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছে সেনাদের চৌকস একটি দল। নিরাপত্তা ইস্যু এতই জোরদার করা হয়েছে যে সেই আস্তানায় থাকা রানস্টকে জানালার পাশেও আসতে দিচ্ছে না সেনারা।

ব্যারাক ছেড়ে যাওয়ার আগে কানিংস একটি রকেট লঞ্চার ও মেশিনগান নিয়ে পালিয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছে সেনা দপ্তর। 

ভাইরোলজিস্ট ভ্যান রানস্ট বেলজিয়ামে করোনা সংক্রমন কমিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। সংক্রমনের ভয়ে ঘরে বসে অফিস করার ঘোর বিরোধিতা করে কৌতুকও করেছিলেন তিনি। জনগণের মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন তিনি। 

রানস্টের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকেই টার্গেট করেছেন কানিংস।রানস্ট অফিস থেকে ফিরেন রাতে। একদিন ঠিক সে সময়ের অপেক্ষায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন কানিংস। কিন্তু সে রাতে দ্রুতই ঘরে ফিরেছিলেন রানস্ট।তাই প্রাণে বেঁচে যান সেদিন।

বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে জার্জেন কানিংসকে ‘মারাত্মক ভয়াবহ লোক’ হিসেবে সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। 

তারাই নিশ্চিৎ করেছে, কানিংস ব্যারাক ছেড়ে যাওয়ার সময় যে নোট রেখে গেছেন, তা থেকেই জানা গেছে রানস্টকে টার্গেট করেছেন তিনি।

বেলজিয়ামের পুলিশের একজন মুখপাত্র সে নোটের বিস্তারিত বিবিসিকে জানান।

কানিংস তার নোটে লিখেছেন, তথাকথিত রাজনীতিক ও ভাইরোলজিস্টরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আমরা কিভাবে বেঁচে থাকা উচিৎ। তাদের শো কেবল ঘৃণা ও হতাশাপূর্ণ। আমি তো এই মিথ্যায় বেঁচে থাকতে পারি না।দিনের পর দিন টেলিভিশনের পর্দায় আপনি ক্রমাগত এসব বলতেই থাকবেন….. মানুষ তো বিরক্ত হয়ে যাবে। এটা নেওয়া যাচ্ছে না।অনেক মানুষ বিজ্ঞানকে স্রেফ ঘৃণা করে। তারা ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়ছে।

অধ্যাপক মার্ক ভ্যান রানস্ট বিবিসিকে বলেন, এটা সত্যিকারেই হুমকি। সাবেক সেনা সদস্য ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করছিল, আমার জন্য অপেক্ষা করছিল।গত ১৮ মে থেকে আমাকে সপরিবারে ঘরবন্দি হতে হয়েছে। আমরা খুব একটা ভয় পাচ্ছি না। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমার ১২ বছর বয়সী ছেলে মাইলো তো এ ব্যাপারে বেশ সাহসী।তবে তিন সপ্তাহ ধরে ঘরে বন্দি থাকা, আমি একদম ঘৃণা করি ব্যাপারটি।

জার্জেন কানিংস নিখোঁজ হওয়ার পর ফেইসবুকে তার একটি ফ্যান গ্রুপও খোলা হয়েছে, যাতে প্রায় ৫০ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। পুলিশ বলছে, এই গ্রুপটা কানিংস থেকেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বেশি।

গত ২৯ মে এক সাইক্লিস্টকে কানিংসের সমর্থনে পতাকা উড়িয়ে রাস্তায় চলতে দেখা গেছে।

সম্প্রতি অধ্যাপক রানস্ট মেসেজিং অ্যাপটেলিগ্রামে কানিংসের সমর্থকদের একটি গ্রুপকে চ্যালেঞ্জ করেন। পরে বুঝতে পারেন, এটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অধ্যাপক রানস্ট বিবিসিকে বলেন, তারা সেই দল, যারা সেই লোকটাকে হিরো মনে করছে।আমার প্রতিবেশীই তারা, আমার আশপাশে থাকে। কিন্তু তারা প্রতিক্ষণে অপেক্ষা করছে, লোকটা আমাকে খুন করতে কতটা বুলেট খরচ করতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তারা কানিংসকে এখনও তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। সে নিখোঁজ হওয়ার পর তার অস্তিত্বেই নাকি খুঁজে পাচ্ছে না। 

তারা ধারণা করছে, কানিংস হয়ত অন্য দেশে ঘাপটি মেরে আছে। একটা নোটে সে লিখে গেছে, রানস্টকে খুন করতে সে পুলিশের সঙ্গে আত্মঘাতি যুদ্ধেও জড়াতে পারে। 

অধ্যাপক রানস্ট বলেন, একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী,যাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে সে কিভাবে অস্ত্রাগারে ঢুকতে পারে ? তদন্তের শুরুতেই তো ভুল। কোনো কিছু গোপন করতে চাইলে সেটা তো আপনি করতেই পারেন। বিশেষ করে আপনি যদি দেশত্যাগ করেই থাকেন।



আরও পড়ুন

×