জাতীয় ঐক্যের ডাক বাইডেনের
জো বাইডেন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১০:৫২ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১০:৫২
৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার ২০তম বার্ষিকী বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিহাসের ওই ঘৃণ্য হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারান। এরপর শুরু হওয়া ২০ বছরের আফগান যুদ্ধের সমাপ্তির কয়েক দিন পর স্থানীয় সময় শনিবার সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক জানানো হয়। এ দিন সকালে নিউইয়র্কে নীরবতা পালনের মাধ্যমে বর্ষপূতির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ওই সন্ত্রাসী হামলার বর্ষপূর্তির আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ডাক দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ উপলক্ষে শুক্রবার তার বক্তব্যের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে তিনি বলেন, 'ঐক্যই আমাদের বড় শক্তি।' এ ছাড়া নিহতদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। খবর এএফপি ও বিবিসির।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দার সদস্যরা যাত্রীবাহী চারটি বিমান ছিনতাই করে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি স্থানে হামলা চালায়। এর মধ্যে দুটি বিমান নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন টাওয়ারে আঘাত হানে। তৃতীয় বিমানটি দিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনে হামলা চালানো হয়। চতুর্থ বিমানটি পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এতে অন্তত দুই হাজার ৯৭৭ জন নিহত হন। সন্ত্রাসী ওই হামলা পর বদলে যায় বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ দিনের শত্রুরাও তখন মিত্র হয়ে পাশে দাঁড়ায় তাদের।
আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও ধৃষ্টতাপূর্ণ ওই হামলার ২০ বছরপূর্তি নানা আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতায় পালিত হয়েছে। ওই হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ। এ বর্ষপূতি উপলক্ষে নিউইয়র্কে হতাহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘরে শ্রদ্ধা জানান সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, তার স্ত্রী মিচেল ওবামা, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ, তার সঙ্গী দিয়ানা টেইলর, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, সিনেটের মাইনরিটি নেতা চার্লস শুমার। পরে পেন্টাগন ও পেনসিলভানিয়ায়ও শ্রদ্ধা জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
এর আগে শনিবার ছয় মিনিটের ওই ভিডিও বার্তা দেন বাইডেন। এতে তিনি বলেন, 'এই হামলার পর যারা ঝুঁকি নিয়েছেন, হামলায় যারা নিহত হয়েছেন এবং হামলার পর উদ্ধারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই।'
বাইডেন বলেন, 'সন্ত্রাসী হামলার যত সময়ই পেরিয়ে যাক, এই স্মরণ সেই বেদনাকে ফিরিয়ে আনে। মনে হয় যেন কয়েক সেকেন্ড আগেই দুঃসংবাদটা এলো।'
বাইডেন স্বীকার করেছেন, ওই হামলার পর মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। মানুষ ভয় ও ক্রোধ থেকে এটা করেছে। তিনি বলেন, এসব হামলার ঘটনায় যুক্তররাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে যে ঐক্য, তা খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কিন্তু ভেঙে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের 'সবচেয়ে বড় শক্তি' হচ্ছে ঐক্য, যা রয়ে গেছে।
এদিন সকালে নিউইয়র্কে এক মুহূর্তের জন্য নীরবতা পালনের মাধ্যমে ৯/১১ হামলার বর্ষপূর্তির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই কর্মদিবসে মোট ছয়টি মুহূর্ত নীরবতা পালন করবে যুক্তরাষ্ট্রবাসী।
ওইদিন বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের অন্যদের সঙ্গে নিহত হন মাইকেল আইকেন। তার স্ত্রী মনিকা আইকেন মুরফি বলেন, 'এটা যুক্তরাষ্ট্রবাসীর জন্য উচ্চতর বার্ষিকী হবে।' তিনি আরও বলেন, 'বেঁচে যাওয়া অনেকের মতো আমার জন্যও ওই ব্যথা কখনও সারার নয়। যা ঘটেছিল, আমি ঠিক ওই মুহূর্তটাই অনূভব করি।'
ওই সন্ত্রাসীর হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের পুরো একটা প্রজন্ম বড় হয়েছে। এরই মধ্যে ওই হামলার পেছনের প্রধান ব্যক্তি ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনাকারীদেরও বিচার শুরু হয়েছে। অন্যত্র টুইন টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। আগের টুইন টাওয়ারে স্থানে স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলা আমাদের বিশ্বাস, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে নাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই হামলায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ব্রিটেনের অন্তত ৬৭ নাগরিক ছিলেন। পৃথক বার্তায় যুক্তরাজ্যের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ বলেন, 'আমরা পরিবার ও জাতির মধ্যে যারা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও প্রার্থনা।'
এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা পৃথক বার্তায় হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
- বিষয় :
- সন্ত্রাসী হামলা
- বাইডেন
- যুক্তরাষ্ট্র