কপ২৬ সম্মেলন
নতুন খসড়ায় জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান

বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে কার্যকর কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয়েছে কপ২৬ সম্মেলন। শুক্রবার শেষ দিনে সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মুখোশ পরে প্রতিবাদ জানান পরিবেশকর্মীরা। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো থেকে তোলা ছবি- এএফপি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ | ২৩:৫১
কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিন গতকাল শুক্রবার নতুন খসড়া চুক্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগের তুলনায় দেশগুলো কীভাবে দ্রুত গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমিয়ে আনবে, সে পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে খসড়ায়। কার্যকর কোনো সমাধান ছাড়াই উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষীণ আশা নিয়ে সম্মেলন শেষ করেছেন বিশ্বনেতারা। বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে সর্বোচ্চ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার যে লক্ষ্য, তা পূরণে ব্যবস্থা নিতে বিশ্বনেতারা ব্যর্থ হয়েছেন। খসড়ায় জলবায়ু পরিবর্তন সামাল দিতে বিশ্বনেতাদের জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা ও তাপদাহের মতো একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করতে বিলিয়ন নয়, কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। খবর দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি ও এএফপির।
গতকাল প্রকাশিত নতুন খসড়ায় জলবায়ু পরিবর্তন সামাল দিতে বিশ্বনেতাদের জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে আরও বেশি সহযোগিতা করতে ধনী দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। নতুন খসড়া অনুযায়ী চুক্তি চূড়ান্ত হতে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব দেশকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। ঐকমত্যে পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী, তাপমাত্রা সীমাবদ্ধ রাখার ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বনের নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে নির্গমন আনতে হবে শূন্য শতাংশে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রভাব সামলাতে এবারের সম্মেলনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এবারের কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে যে অগ্রগতি তাতে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গুতেরেস বলেছেন, উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্য এখন 'লাইফ সাপোর্টে'। কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ 'যথেষ্ট পরিমাণ' কমাতে সম্মেলনে সরকারগুলোর অঙ্গীকার দেখা যাবে না বলেও আশঙ্কা তার। গ্লাসগো সম্মেলনে যেসব ঘোষণা এসেছে তা 'প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম' বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এর আগে কপ২৬-এর প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সময় শেষ হয়ে আসছে বলে সতর্ক করেছিলেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব এড়ানো যাবে। ২০১৫ সালে প্যারিসে বিশ্বনেতারা গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ ব্যাপক মাত্রায় কমিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি (প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে) দেড় থেকে দুই ডিগ্রির মধ্যে রাখার চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ হিসাব বলছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন আমলের চেয়েও ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশিতে পৌঁছানোর পথে রয়েছে।
সম্মেলনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় ধনী দেশগুলো বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে আইপিসিসি বলছে, আগের হিসাব-নিকাশ বদলে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে খরচের যে পরিমাণ ধারণা করা হয়েছিল, দেখা যাচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানেই এর প্রভাব থেকে মানুষকে বাঁচাতে খরচ বেড়ে যাওয়া। ২০৫০ সালের মধ্যে এই খরচের পরিমাণ বছরে এক ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
প্রায় এক দশক পুরোনো ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার পরিমাণকে একেবারেই সেকেলে বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েন্টিস্টের অর্থনীতিবিদ রাচেল ক্লিটাস। তিনি বলেন, 'আমরা যদি ২০২৫ সালের পরের কথা বলি, তখন আদতে ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন পড়বে।' আইপিসিসির হিসাব অনুযায়ী, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অবকাঠামো নির্মাণ, কৃষিকাজ, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণের মতো খাতগুলোতে আগামী এক দশকে ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করলে তা থেকে ৭ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাবে।
২০২২ সালে কপ২৭ জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করবে মিসর এবং ২০২৩ সালে কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
- বিষয় :
- কপ২৬ সম্মেলন
- কপ২৬
- জলবায়ু সম্মেলন