ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

রুটির প্লেটে যুদ্ধের প্রভাব

রুটির প্লেটে যুদ্ধের প্রভাব

ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২২ | ১০:৫২ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ | ১০:৫৯

পৃথিবীজুড়ে আটা-ময়দার ভোক্তারা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের দায় মেটাচ্ছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গম। এর একমাত্র কারণ, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মানুষ নাশতার টেবিলে ইউক্রেনের গমের তৈরি আটার ওপর নির্ভরশীল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর রুটির ঝুড়ি খ্যাত ইউক্রেনে হামলা করে রাশিয়া। প্রথম দিনের হামলাতেই কৃষ্ণসাগর বন্দরের সব বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিশ্বব্যাপী গমের দাম বেড়ে যায় ৪০ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারকে আরও ওপরের দিকে ঠেলে দেয়। এমনিতেই গত এক দশক ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী গমের চাহিদার ৩০ শতাংশ এবং ভুট্টার ২০ শতাংশ পূরণ করে থাকে রাশিয়া ও ইউক্রেন। যুদ্ধের ফলে দেশ দুটি থেকে গম ও ভুট্টার সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ খাদ্য অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা এই সমস্যা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। কারণ গম আমদানির ক্ষেত্রে অঞ্চল দুটি রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে চুক্তিবদ্ধ। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের মুখপাত্র জুলি মার্শাল বলেন, বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতি আমাদের ধারণার চেয়েও নাজুক অবস্থায় রয়েছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে তেল ও গ্যাসের দামও বেড়ে গেছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে পরিবহন খরচে। অথচ করোনা মহামারির কারণে মালবাহী জাহাজের ভাড়া ও ইস্পাতের মতো কাঁচামালের দাম আগে থেকেই আকাশছোঁয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো বৃহৎ গম উৎপাদনকারী দেশগুলোও এই অচলাবস্থার বাইরে নয়। ইতোমধ্যে দেশ দুটির বাজারে গমের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে।

আমেরিকান বেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী রব ম্যাকি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে আগামীতে সাময়িক সময়ের জন্য গম ও অন্যান্য বেকর্ড পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যা দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সমাজের গরিব শ্রেণিকে প্রভাবিত করবে।'

কানাডায় খরা ও খাদ্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করতে সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগেই আটা-ময়দা ও পণ্যের দাম ৭ শতাংশ বাড়িয়েছিল ক্যালাগরি ইতালিয়ান বেকারি। এই বেকারি লুইস বনতোরিনের পারিবারিক ব্যবসা। গত ৬০ বছর ধরে তিনি এই বেকারি চালাচ্ছেন। সম্প্র্রতি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী গমের দাম আবারও বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বনতোরিন বলেন, আবারও আটা-ময়দার মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া খুবই হতাশার। রুটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এই খাবার সরাসরি মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু মূল্য না বাড়িয়েও আমার উপায় নেই। এভাবে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে দুইবার মূল্যবৃদ্ধি করা আমার ব্যবসার জন্যও হুমকি। এভাবে বেশিদিন চললে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে।

ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বড় ধরনের খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে তুরস্ক ও মিসর। দেশ দুটি রাশিয়া ও ইউক্রেনের অন্যতম বড় গম আমদানিকারক দেশ। এ ছাড়া ইউক্রেনের খাদ্যশস্যের প্রধান ক্রেতা হচ্ছে লেবানন, ইয়েমেন, ইসরায়েল ও ওমান। লেবানন ও ইয়েমেন ইতোমধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দেশ দুটি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে বাধ্য। আরব উপসাগরীয় দেশগুলোতেও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়বে। কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব ইউক্রেনের খাদ্যপণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এই যুদ্ধের ফলে দেশগুলোতে খাদ্য সংকট তৈরি হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে সংঘটিত আরব বসন্তের অন্যতম কারণও ছিল এ খাদ্য সংকট।

আরও পড়ুন

×